সারাদেশ

সিঁধ কেটে চুরি করা ২ মাসের শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন এসপি

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের গৃহবধূ নাজনীনের ঘরে সিঁধ কেটে দুর্বৃত্তরা তার কোলের শিশু দুই মাস বয়সি জুনাইদকে চুরি করে। রোববার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই শিশুকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

 

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটার পর আমরা বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযানে নামি এবং তাতে সুফলও পাওয়া যায়।

 

আমরা ওই গ্রামের সস্থু বেগম (৫৫) নামে এক নারীকে আটক করি। তার মেয়েকে সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেত্রাটি গ্রামের মৃত শহীদ মিয়ার ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়া হয়।

 

রোববার কিশোরগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চতুর্থবারের মতো রুবেলের স্ত্রী একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। রুবেল এবার তার কন্যাসন্তানের সঙ্গে একটি পুত্র সন্তানেরও জন্ম হয় বলে দাবি করেন। তিনি ওই দুই মাস বয়সি শিশু জুনাইদকে চুরি করে ওই ক্লিনিকে এনে সদ্যজাত নবজাতকের ন্যায় চুরি করা শিশুটির নাভিতে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখে।

 

কিন্তু বাচ্চার বয়স ও আকৃতি একদিনের নবজাতকের মতো না হওয়ায় সন্দেহ হয়। পরে শাশুড়ির সঙ্গে তাকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পুলিশের কাছে সে স্বীকার করে- বারবার মেয়ে সন্তান জন্ম নিলেও ছেলে সন্তানের মুখ দেখছিল না সে। আর তাই শাশুড়ির মাধ্যমে খবর পেয়ে ছেলে সন্তানের খায়েশ মেটাতে ওই নবজাতক শিশুটি চুরি করে।

 

জানা গেছে, রোববার গভীর রাতে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাগ গ্রামের গৃহবধূ নাজনীন তার কোলের শিশু জুনাইদকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। জুনাইদের বাবা দরিদ্র সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রামে থেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন।

 

আর এ কারণে তিনি অধিকাংশ সময়ই চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। তার স্ত্রী নাজনীন আক্তারকে তাই প্রায়ই পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কোলের নবজাতক শিশুপুত্রকে নিয়ে কাঁচা ভিটির টিনের ঘরে রাতযাপন করতে হয়।

 

বরাবরের মতোই নাজনীন আক্তার তার কোলের পুত্রসন্তান জুনাইদকে নিয়ে রোববার রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখেন তার কোলশূন্য। জুনাইদ বিছানার কোথাও নেই। তারপরই শুরু হয় ডাক-চিৎকার।

 

ছুটে আসলেন আশপাশের লোকজনও। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ঘরের এক দিকে সিঁধ কাটার সন্ধান পান তারা। তখন আর বোঝার বাকি থাকল না যে শিশু সন্তানটি চুরি হয়ে গেছে।

 

খবর পেয়ে ছুটে আসে তাড়াইল থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের দল। তারা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করে বিকাল ৬টার দিকে প্রতিবেশী নারী সস্থু বেগম ও তার মেয়ের জামাতা রুবেলকে গ্রেফতার করে। তাদের হেফাজত থেকে চুরি যাওয়া দুই মাসের শিশু জুনাইদকে উদ্ধার করে।

 

চুরি যাওয়া শিশুটিকে কোলে ফিরে পেয়ে মা নাজনীন আক্তার বললেন, আমার কলিজার ধন ফিরে পেয়েছি। বলতে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ সুপার স্যার তাকে আমার কোলে তুলে দিয়েছেন।

 

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আল আমিন হোসাইন, ডিবির ওসি মো. আবুল বাশার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

আরও খবর

Sponsered content