সারাদেশ

শরিফুলের জীবন বদলের গল্প হাঁসের খামারে

শরিফুলের জীবন বদলের গল্প হাঁসের খামারে

একসময় ঠিকমত খাবার জুটত না; আর্থিক টানাপড়েনে লেখাপড়াও বেশি দূর এগোয়নি। ছিল না কোনো কাজের অভিজ্ঞতাও। তারপর একটি হাঁসের খামার জীবনের বাঁক বদলে দেয় যশোরের শার্শা উপজেলার শরিফুল ইসলামের। উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়নের ছোট কলোনির আলমপুর গ্রামের খোরশেদ আলম ও হনুফা খাতুন দম্পতির সেজো ছেলে শরিফুল জানান, বছর তিনেক আগে দশটি হাঁস দিয়ে ছোট একটি খামার শুরু করেন। অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও পরিচর্যা চালিয়ে যান খামারের। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি।

 

২৪ বছর বয়সী এ যুবকের হাঁসের খামারটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে গিয়ে খামার ঘুরে দেখার পর মন ভেসে যায় তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে। মা-বাবার পাশাপাশি স্ত্রী রুনা পারভীনও তাকে এই পর্যায়ে আনতে সহায়তা করেছেন বলে জানান শরিফুল। তিন বছর ধরে হাঁস পালন করছি। নিজে না খেয়ে থাকলেও হাঁসগুলোকে দেখভাল করেছি সন্তানের মতো। আল্লাহ মুখ তুলেছেন, তাই অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে; পার করতে পেরেছি অভাবের দিনগুলো।

 

বাড়ির পাশে ‘মাখলার বিলে’ সারাদিন হাঁসের ঝাঁক নিয়ে থাকেন শরিফুল। হাঁস বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাদের পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে মা আর স্ত্রীর ওপর। আর হাঁসের ওষুধ, খাবার কেনা ও ডিম বিক্রির বিষয়টা দেখেন বাবা। এটা তাদের নিত্যদিনের কাজ। কথার বলার এক পর্যায়ে অতীত স্মরণ মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন শরিফুল। বলেন, “শুরুটা সহজ ছিল না; ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এই খামার। নিজে তো পড়াশুনা করতে পারি নাই। তাই খামার থেকে যা আয় করি তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি।

 

স্বল্প পুঁজি নিয়েও হাঁসের খামার করা যেতে পারে বলে জানালেন এ খামার মালিক। বিশেষ করে পুকুর, ডোবা অথবা খাল-বিলের পাশে খামার গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু অনেকে হাঁসের রোগবালাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে হাঁসের রোগ নির্মূল করা সম্ভব বলে জানান তিনি। বর্তমানে শরিফুলের খামারে ২৫০টি হাঁস রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এই হাঁসগুলোর প্রতিটি ৪৫০ টাকা দরে বরিশাল থেকে কেনেন। খামারে আনার ১৬ দিন পর থেকে হাঁসগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। তিন মাস বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ১৮০ থেকে ২০০টি ডিম দেয়।

 

প্রতিটি ডিম ১৫ টাকা হিসাবে পাইকারি বিক্রি হয় জানিয়ে শরিফুল বলেন, “সকল খরচা বাদ দিয়ে তিন মাসে লাভ হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। আমাদের খামারের সকল হাঁসই ‘ক্যাম্বেল’ জাতের। একটি হাঁস তিন মাস একাধারে ডিম দিয়ে থাকে। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। হাঁসের বয়স ১৭ মাস হলে ওরা ডিম কম দেয়, তখন ওগুলো বিক্রি করে দেই।

 

“তবে সংসারে খরচা সামলে খামারে হাঁসের সংখ্যা বাড়াতে পারছি না। সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারটি বড় করতে পারতাম।” প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে শরিফুলের হাঁসের খামার দেখতে আসেন; পরামর্শ নেন। এছাড়া তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক তরুণ স্বল্প পরিসরে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন বলে জানান শরিফুল।

 

শরিফুলের হাঁসের খামার সত্যিই ‘অনুকরণীয়’ বলছেন শার্শার বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক। হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে সংসারের অভাব দূর করেছেন। তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকে হাঁসের খামার তৈরি করছে, এতে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

 

শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, খাল-বিলে ভরা এ উপজেলায় হাঁস পালন ব্যাপক সম্ভাবনাময়। উপযোগী পরিবেশের কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছেন।

 

“আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকেও হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি। হাঁস ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং বিপণন ব্যবস্থা ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

 

আরও খবর

Sponsered content