সারাদেশ

ঢাবি শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৮

ঢাবি শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে রমজানের আলোচনা সভায় হামলা করেছে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহিদুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮ শিক্ষার্থী আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ৩ জনকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

 

বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাবির বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এই তথ্য জানা যায়। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন— ঢাবির আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান, রেজওয়ান, রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী, কুতুবউদ্দিন। এদের মধ্যে শাহীন, রেজওয়ান ও সাকিবের অবস্থা গুরুতর। তারা সবাই ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রমজানকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি ও সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ক ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়।

 

আয়োজনের জন্য নির্ধারিত স্থান ও সময় অনুযায়ী বিভাগের শিক্ষার্থীরা জোহরের নামাজ পড়ে মসজিদে বসে। এসময় কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মসজিদে সভা করার অনুমতি নেই বলে তাদের বের হয়ে যেতে বলে। পরে শিক্ষার্থীরা বের হলেই তাদের ওপর হামলা করা হয়।

 

বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের দারোয়ান কবির হোসেন বলেন, আমি তখন দারোয়ানদের জন্য বসার রুমেই বসে ছিলাম। নামাজ শেষে কয়েকজন বের হলো, আর গেটের বাহিরেই মারামারি শুরু হলো। আমি তাড়াহুড়ো করে গেট অফ করে দিই। একজন শিক্ষার্থী ওদের হামলা থেকে বাঁচতে বিতরে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু গেট অফ করে দেওয়ার কারণে ভিতরে ঢুকতে পারেনি।

 

কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা কয়েকজন নামাজ পড়ার পর গোল হয়ে বসে মিটিং করছিল। আমি তখন তাদেরকে বললাম যে এখানে মিটিং করার অনুমতি নেই। আপনারা বাহিরে চলে যান। পরে বের হওয়ার পরেই কয়েকজন তাদের ওপর হামলা করে।

 

ভুক্তভোগী আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম শহীদী বলেন, আমার তাবলীগের বন্ধু ও বড় ভাইয়েরা রোজার আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে আসি। আমরা আগেই এটা প্রচার করেছি যে আমরা রোজার ফজিলত, মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু হঠাৎ অপরিচিত কয়েকজন মসজিদে এসে আমাদের বের হতে বলে।

 

তাছাড়া টাওয়ারের কর্মচারীরাও আমাদের চলে যেতে বললে আমরা বের হই। এসময় আমরা গেটের কাছাকাছি আসতেই ৩০ থেকে ৪০ জন আমাদের ওপর হামলা করে। পরে আমরা জানতে পারি তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল। তাবলীগের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করবে, আমরা ভাবতে পারিনি।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত তাওহীদুল ইসলাম সুজন বলেন, এগুলো বানোয়াট ও মিথ্যা। একটা ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমি অসুস্থ, আমার দাঁতে ব্যথা। আমি তাদের মারতে যাব কেন? তাছাড়া তখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম।

 

এ বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আইন বিভাগের একদল জামাত-শিবিরের ছেলে সেখানে সেমিনার করতে বসেছিল। কিন্তু তারা সবাইকে তাবলীগ বলে বেড়াচ্ছে। পরে সেখানে থাকা স্থানীয়রা তাদের সেমিনার করতে নিষেধ করলে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং একসময় তারা স্থানীয়দের ওপর হাত তোলে। এসময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আশপাশে থাকায় তাদের থামায়।

 

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত-শিবির ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। তারা মসজিদকে রাজনীতির কেন্দ্র বানিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম রুখতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আজ থেকে ক্যাম্পাসে আরও সক্রিয় হব।

 

এ বিষয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীমা জামান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা তারা আমাকে জানায়। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, বিষটি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমরা বিষয়টি দেখব।

 

আরও খবর

Sponsered content