সারাদেশ

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও এনজিও

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও এনজিও

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ‘ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি’ নামের একটি এনজিও। এতে উপজেলার দুই থেকে আড়াই শতাধিক গ্রাহকের মাথায় হাত পড়েছে। এ ঘটনায় সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ওই এনজিওর অফিসের সামনে ভিড় করেন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী উদ্বিগ্ন শতাধিক গ্রাহক। পরে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিক ও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন

 

জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি উপজেলার সদর এলাকার আবুল কাশেম মুহুরির বাসা ভাড়া নেয় ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি নামের একটি এনজিও। ওই ভাড়া বাসায় অফিস চালু করে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন এনজিওর সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। এরপর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে কাজ শুরু করেন তারা। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। ঋণ নিতে নির্ধারিত তারিখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশত গ্রাহক এসে এনজিওর অফিস তালাবদ্ধ পায়। এ সময় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে ও থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

 

আরও জানা যায়, ঋণ প্রদানের ফাঁদে ফেলে এরই মধ্যে এনজিওটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহজসরল মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এনজিও কর্মীরা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ সঞ্চয়ের নামে হাতিয়ে নেয় বেশ পরিমাণ টাকা।

 

ভুক্তভোগী পূর্ণমতি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান, নাল্লা এলাকার মিজানুর রহমান, নাগাইশ এলাকার মো. ফেরদৌস, ইয়াসিন মিয়া, শাহ আলম, তোফাজ্জল হোসেন, কাইয়ুম, মুমিন মিয়া, আলম হোসেন, মহিবুল হাসান, কায়ছার মিয়া, ডগ্রাপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান, লাভলী আক্তার, পপি আক্তারসহ প্রায় দুই থেকে আড়াই শতাধিক গ্রাহক এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।  আমরা খেটে-খাওয়া মানুষ। তাদের প্রলোভনে পড়ে আমরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমরা এর বিচার চাই।

 

ভুক্তভোগী ইব্রাহিম জানান, প্রতারকচক্র গত ৪ দিন আগে আমাদের গ্রামে এসে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও পণ্য দেওয়ার নামে কয়েকজনের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা নেয়। এখন শুনি এটি ভুয়া এনজিও। আমরা এই প্রতারক চক্রের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চাই।

 

আরেক ভুক্তভোগী শাহ আলম বলেন, আমরা সহজ সরল মনে ‘ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পোভার্টি’ নামে একটি এনজিওতে ঋণ পাওয়ার আশায় বেশ কয়েকজন কয়েক হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দেই। সেই এনজিও থেকে আমাদের কয়েক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা হয় কিন্তু এখন দেখি অফিস বন্ধ।

 

বাড়ির মালিক আবুল কাশেম মুহুরি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি কোনো এনজিওকে ঘর ভাড়া দেইনি। এ দিকে বাড়ির মালিকের ছেলে শরিফুল ইসলাম সৌরভ বলেন, অপরিচিত এক ব্যক্তি হঠাৎ করে এসে বলেন তার কয়েকটি রুম লাগবে অফিস করার জন্য। তারা ১৫ জানুয়ারি ডিট করার কথা ছিল। সে আমার শর্তে রাজি হলে তাকে আমি বলি আপনি আপনার মালামাল রাখতে পারেন। কিন্তু ডিট না হওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আমি জানি না।

 

এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি এসএম আতিক উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স.ম আজহারুল ইসলাম বলেন, একটি ভুয়া এনজিও গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগী কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে শুনতে পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

তিনি আরও বলেন, উপজেলার সকলের প্রতি আহ্বান করব যে কোনো এনজিও থেকে টাকা লেনদেন করার আগে অবশ্যই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ওই এনজিওর কোনো প্রত্যয়ন আছে কি না তা ভালোভাবে যাচাই করবেন। এসব বিষয়ে উপজেলাবাসীকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

 

আরও খবর

Sponsered content