আন্তর্জাতিক

হত্যার পর মরদেহের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাল ইসরাইলি বাহিনী

হত্যার পর মরদেহের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাল ইসরাইলি বাহিনী

পশ্চিমতীরে অভিযানের সময় ফিলিস্তিনিদের হত্যার পর তাদের শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনা ‘ঘৃণা এবং চরমপন্থার সংস্কৃতিকে’ প্রতিফলিত করেছে বলে এক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান। খবর রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।

 

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের তুলকারম শহরে অভিযান চালানোর সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী অভিযানে তাদের গুলিতে নিহত এক ফিলিস্তিনির মরদেহের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকবার গাড়ি চালিয়ে দেয়। একাধিক সিকিউরিটি ক্যামেরায় ওই নৃশংসতা ধরা পড়ছে। যে ভিডিওগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল।

 

গত সোমবার ইসরাইলের সীমান্ত পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কমান্ডরা একজন পলাতক জঙ্গিকে ধরতে তুলকারমে অভিযান চালায়। সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে তিন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী নিহত হয়। সোমবারের ওই অভিযানের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাতের বেলা ইসরামফলি বাহিনী একটি বাড়ির সামনে হাজির হয়ে সেখানে থাকা একদল তরুণের ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে সড়ক ধরে দৌড়াতে থাকে। তাদের অন্তত একজনের কাছে একটি রাইফেল ছিল।

 

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সড়কে দুই তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। তাদের আর নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। অন্য কোণ থেকে নেওয়া আরেকটি ফুটেজে তৃতীয় আরেক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যেতে দেখা যায়। ফুটেজে আরও দেখা যায়, ইসরাইলি বাহিনীর একটি গাড়ি মাটিতে পড়ে থাকা দুই তরুণের মৃতদেহের কাছে যায় এবং একটি লাশের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়।

 

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পরে কোনো এক সময় একটি মৃতদেহ সড়ক থেকে পাশে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং আরেকটি গাড়ি পেছন দিকে চলতে চলতে ওই মৃতদেহটিকে দুইবার মাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে সীমান্ত পুলিশের একজন মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলতে বলেন। রয়টার্স থেকে সেখানে যাওয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

 

অন্য একটি ক্যামেরায় একই ঘটনার কিছুক্ষণ আগের মুহূর্ত ধরা পড়ে। সেখানে দেখা যায়, এক দল ফিলিস্তিনি ওই বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসছেন। দৌড়াতে দৌড়াতেই তাদের একজন অন্য একজনের হাতে একটি রাইফেল তুলে দেয়। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বলেছে, নিষ্ঠুর এই ঘটনা ‘ঘৃণা এবং চরমপন্থার সংস্কৃতিকে’ প্রতিফলিত করছে।

 

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতেই সমাধান দেখছে ইইউ : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, কেবল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাই শান্তি আনতে পারে। লেবানন সফরকালে গাজা সংকট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, আরব ও ইউরোপীয়রা এ শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে চায়।

 

গাজার আল-আকসা হাসপাতাল থেকে সোমবার ব্রিটিশ সার্জন ড. নিক ম্যানার্ড বলেন, হাসপাতালটির অবস্থা খুবই খারাপ। দগ্ধ শিশুরা সেখানে চিকিৎসার জন্য আসছে। পর্যাপ্ত ব্যথানাশক নেই। জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, গাজায় ইসরাইল একটি এতিম প্রজন্ম সৃষ্টি করছে।

 

ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ২৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ (১৯ লাখ ফিলিস্তিনি)। তারা প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে চরম দুর্দশায় দিনাতিপাত করছেন। সেখানে খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র সংকট রয়েছে।

 

এ পরিস্থিতিতে তুরস্ক সফর করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিন ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে তার জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিসর সফর করার কথা রয়েছে।

 

আরও খবর

Sponsered content