সারাদেশ

নদীকে বিল দেখিয়ে ইজারা, ক্ষতিগ্রস্ত অভয়াশ্রম

নদীকে বিল দেখিয়ে ইজারা, ক্ষতিগ্রস্ত অভয়াশ্রম

রংপুরের পীরগাছায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা একমাত্র মৎস্য অভয়াশ্রম মাসানকুড়া নদী। নিয়মানুযায়ী অভয়াশ্রমের মা মাছসহ যেকোনো ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। অথচ অভয়াশ্রম থাকার পরও নদীটিকে বিল দেখিয়ে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। অবাধে কারেন্ট জাল ও বেড় জাল দিয়ে মা ও পোনা মাছ শিকার চলছে। যদিও সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, নিয়ম মেনেই ইজারা দেওয়া হচ্ছে।

 

মাসানকুড়া নদীতে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও স্থানীয় জাতের মাছ সংরক্ষণে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এ জন্য নদীর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় পাঁচ থেকে ছয়টি অভয়াশ্রম।

 

উপজেলা মৎস্য দপ্তর বলছে, উপজেলা গভর্ন্যান্স প্রকল্পের আওতায় মাসানকুড়া নদী অভয়াশ্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের মোট আয়তন ছিল নদীর ২২ দশমিক ২৩ একর এলাকা। ২০২১ সালের মার্চে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বাড়ানো প্রকল্পের অধীনে ৬৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নদীটি খননও করা হয়েছে।

 

এ ছাড়া প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার পোনা অবমুক্ত করা হয় এই নদীতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকেই প্রভাবশালী একটি মহল প্রশাসনের যোগসাজশে মাসানকুড়া নদীকে বিল হিসেবে দেখিয়ে লিজ নিচ্ছে।

 

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভয়াশ্রম ঘোষণার পর দুই বছরের মধ্যে সাফল্যও পাওয়া যায়। বোয়াল, কই, শিং, টাকি, পুঁটি, ট্যাংরা, দেশি সরপুঁটি, পাবদা, চিতলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ ফিরে আসে নদীতে। তবে সম্প্রতি এসব মাছের পরিমাণ কমেছে।

 

যদিও নিয়ম মেনে ইজারা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। তিনি বলেন, মাসানকুড়া নদী ২০ একরের বেশি জায়গা সায়রাতভুক্ত একটি বিল। এটি ২০১৪ সাল থেকে লিজ দেওয়া হচ্ছে। এ বছরও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কারও আপত্তি থাকলে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।

 

তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এ ঘটনায় তাঁরা সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে অভিযোগ করলে কর্তৃপক্ষ মেয়াদ শেষে নতুন করে আর লিজ দেওয়া হবে না বলে তাঁদের আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই লিজের মেয়াদ শেষে নতুন করে আবার পাঁচ বছরের জন্য লিজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে মৎস্যজীবী সমিতিকে এ লিজের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব উল আলম বলেন, ‘সম্প্রতি আমি যোগদান করেছি। অভয়াশ্রমটি বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের আশ্রয়স্থল ও প্রজননক্ষেত্র। এটি লিজ দিলে সমস্যা হবে।

 

গত দুই বছর এই নদী লিজ পেয়েছিল মাঝিপাড়া মৎস্যজীবী সমিতি। এই সমিতির সভাপতি প্রেমানন্দ বলেন, ‘আগে সরকারি নীতিমালা মেনে সব শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। সেই হিসেবে আমাদের লিজ দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে এ বছরও লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি।

 

বিপাকে স্থানীয়রা
এদিকে আবারও লিজ দেওয়া হলে বিপাকে পড়বেন স্থানীয়রা। ওই মাসানকুড়া পাড়ের বাসিন্দারা লিজ দেওয়ার আগে নদীতে গোসল করতেন। ইজারা নেওয়ার পর তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে নদীতে মুরগির বিষ্ঠা দেওয়া হয়। এ ছাড়া হিন্দুধর্মাবলম্বীরা অষ্টমী স্নান ও বারুণী মেলা উপলক্ষে নদীতে স্নান সেরে পূজা-অর্চনা করতেন।

 

এখন তা-ও হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা অতুল চন্দ্র ও নারায়ণ চন্দ্র একই কথা বললেন। তাঁদের ভাষ্য, অভয়াশ্রমটি লিজ দেওয়ার পর সেখানে সমিতির লোকজন মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করায় গোসল করা বন্ধ রয়েছে। কয়েক বছর ধরে জন্মাষ্টমীর মেলা হলেও স্নান হচ্ছে না। দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষ টিকতে পারে না।

 

আরও খবর

Sponsered content