সারাদেশ

ইমাম-ইউএনওর ঝামেলা নিয়ে যা বললেন সেই ইমাম আবুল বাশার

ইমাম-ইউএনওর ঝামেলা নিয়ে যা বললেন সেই ইমাম আবুল বাশার

জুমার নামাজে (ইউএনও) ‘একটু সরে কাতারে (লাইনে) দাঁড়াতে’ বলাকে কেন্দ্র করে ইউএনও-ইমামের মধ্যকার সমস্যা মিটমাট করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। রোববার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে।

 

গত ১৩ অক্টোবর জুমার নামাজে সারিতে দাঁড়ানো নিয়ে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটরা কাচারি কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম আবুল বাশার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহির মাঝে ঝামেলা হয়।

 

১৫ অক্টোবর বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ইউএনও এবং ইমামকে ডেকে আনা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক দুজনের বক্তব্য শোনেন। পরে ইউএনও তার গাড়িতে করে ইমামকে নিয়ে মসজিদে যান। এরপর তারা ওই মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।

 

জুমার নামাজে সারিতে দাঁড়ানো নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও ইমামের ঝামেলার বিষয়টি ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম অস্বীকার করেন। এদিকে ওই ঘটনার পর মসজিদের ‘ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে’ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়।

 

রোববার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার সাংবাদিকদের জানান, ‘তিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ওইদিন নামাজ শেষে ইউএনও তাকে ডেকে নিয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন, তবে তার চাকরি যায়নি।

 

রোববার বিকেলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষে ওই ইউএনও, ইমাম এবং বাংলাদেশ খতিব কাউন্সিল, জেলা ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

স্থানীয়রা জানান, লালমাই উপজেলার ইউএনও ফোরকান এলাহি অনুপম গত ১৩ অক্টোবর ওই উপজেলার ভাটরা কাছারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের পুকুরে সকাল থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। এদিন বেলা সোয়া একটার দিকে জুমার নামাজ পড়তে যখন তিনি ওই মসজিদে প্রবেশ করেন, তখন খুতবা শেষ হয়। এরপর মসজিদের মুয়াজ্জিন পারভেজ হোসেন ইউএনওকে একটু সরে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য বলেন।

 

তারা আরও জানান, ইউএনও নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে পুকুরের ঘাটে ডেকে নেন। এরপর ইউএনওকে চেনেন কি-না জানতে চান। তখন ইমাম আবুল বাশার বলেন, ইউএনওকে চিনতে পারেন নি। এ জন্য তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে ইউএনও ক্ষুব্ধ হয়ে ইমামকে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে নানান প্রশ্ন করেন।

 

মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা তো ইউএনও মহোদয়কে চিনি না। মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসেন। নামাজ শুরুর আগে ডান-বাঁ দেখে লাইনে (সারি) দাঁড়ানোর জন্য সব সময়ই বলা হয় মুসল্লিদের। এটা তো দোষের কিছু নয়। এরপরও তিনি তার মতো করে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন। নামাজ শেষে তিনি আমাকে ও মুয়াজ্জিনকে ডেকে নেন।

 

এরপর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করার পর চলে যেতে বলেন। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, আমাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। ইউপির চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ বলেন, ইমামের চাকরি যাওয়ার বিষয়টি জানা নেই।

 

এদিকে, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়ার অফিসকক্ষে লালমাইয়ের ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম, বাংলাদেশ খতিব কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মাওলানা শামীম মজুমদার, কুমিল্লা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমানসহ দুই সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা, মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার, স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহসহ এক বৈঠক হয়।

 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, ‘বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমনটি হয়েছে, বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। বৈঠক শেষে ইউএনওর গাড়িতে করে ইমাম লালমাইয়ের উদ্দেশ্যে চলে গেছেন।’

 

বৈঠক শেষে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার বলেন, ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমন প্রচারণা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার চাকরি যায়নি। আমি বহাল আছি। লালমাইয়ের ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, ‘বিষয়টির সুরাহা হয়েছে, এর বেশি কিছু বলব না।

 

আরও খবর

Sponsered content