সারাদেশ

টিকিট ছাড়া পার্কে প্রবেশ, কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো শিশুদের

শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত একটি পার্কে টিকিট ছাড়া প্রবেশ করার অভিযোগে পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সোমবার সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে তাদের আটক করেন গ্রামপুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পরে তাদের ওই শাস্তি দেওয়া হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইন উদ্দিনের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে আটক শিশুদের শাস্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি ও ভিডিও করেন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। এসব ছবি ও ভিডিওতে ইউএনওকে দেখা গেছে।

 

শরীয়তপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সদর হাসপাতালের সামনে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির পাশে পার্ক নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন দুপুরে পার্কটি উদ্বোধন করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ। এর চারদিকে সীমানা প্রাচীর রয়েছে। ভেতরে শিশুদের খেলার জন্য মাত্র ১৫-১৬টি বিভিন্ন রাইড বসানো হয়েছে।

 

পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। পার্কের প্রবেশদ্বারে কাউন্টার রয়েছে। ঈদের দিন দুপুর থেকে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা। পার্ক দেখভালের দায়িত্বে আছেন ইউএনও মো. মাইন উদ্দিন। সেখানে কয়েকজন গ্রামপুলিশ ও আনসার সদস্য পাহারায় রয়েছেন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকালে জেলা শহরের তুলাসার, ব্যাপারীপাড়া ও স্বর্ণঘোষ এলাকার কয়েক শিশু পার্কের পাশে খেলাধুলা করছিল। তারা সন্ধ্যার দিকে সীমানা প্রাচীর টপকে পার্কে প্রবেশ করে। গ্রামপুলিশ ও আনসার সদস্যরা পাঁচ শিশুকে আটক করেন।

 

তাদের ধরে পার্কের উত্তর-পূর্ব দিকে আনা হয়। তখন সেখানে আসেন ইউএনও মো. মাইন উদ্দিন। চার শিশুকে কানে হাত দিয়ে দাঁড় করে রাখা হয়। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা কাঁদতে থাকে। যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের কাছ থেকে পার্কে প্রবেশের টাকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

রাত সাড়ে ৯টার দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রামপুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন ওই দুই শিশু তাদের চোখ এড়িয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়।

 

আটকে রাখা শিশুদের মধ্যে একজন শহরের একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে জানায়, তারা পার্কের সীমানা প্রাচীরের পাশে খেলছিল। সীমানা প্রাচীরের উপর উঠলে অন্য বন্ধুরা তাকে ধাক্কা মারে। তখন আনসার সদস্যরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক ও একজন অভিভাবক বলেন, শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। এটা অমানবিক।

 

এ ব্যাপারে ইউএনও মাইন উদ্দিন বলেন, শিশুদের কান ধরিয়ে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। কয়েক শিশু দেয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। পাশে যারা ছিলেন তারা তাদের ধরে এনেছেন। ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে।

 

তবে আমি তাদের (শিশুদের) বলেছি- দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করা অপরাধ। এটা চুরির সমান অপরাধ। তোমরা আর কখনো এ কাজ করবে না। সৎ ও ভালো মানুষ হয়ে জীবনযাপন করবে। এ কথা বলে আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি। দুই শিশুকে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনাটি আমার জানা নেই।

 

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

 

আরও খবর

Sponsered content