সারাদেশ

ব্রিটিশ ভারতের প্রথম প্রশাসনিক ভবন যশোরে

ব্রিটিশ ভারতের প্রথম প্রশাসনিক ভবন যশোরে

ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরে ২২২ বছর আগে নির্মিত হয় প্রশাসনিক ভবন। ব্রিটিশ ভারতের প্রথম প্রশাসনিক ভবনটি আজ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জেলা রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরে পরিত্যক্ত ভবনটি হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষণের দাবি যশোরবাসীর। একই সঙ্গে আরও ৪টি ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ। এ নিয়ে আন্দোলন করছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জানা যায়, ১৭৮১ সালে জেলায় উন্নীত করার মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলায় যশোরে সর্বপ্রথম আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়। যশোরের সদর দপ্তর ছিল মুড়লীতে। ১৭৮৯ সালে রিচার্ড রোক মুড়লী থেকে জেলার সব অফিস কসবায় স্থানান্তর করেন। কসবার আরেক নাম ছিল সাহেবগঞ্জ। সেখানে ১৮০১ সালে যশোর কালেক্টরের নিজস্ব ভবন তৈরি হয়। কসবায় প্রথম যে প্রশাসনিক ভবনটি নির্মিত হয়েছিল, সেটি এখন যশোর জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পরিত্যক্ত ভবন। ৮৫ বছর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সব কাজ ওই ভবন থেকে পরিচালিত হয়েছে। কাজের পরিধি বাড়ায় ১৮৮৫ সালে যশোর কালেক্টরেট নতুন ভবনে (বর্তমান ভবন) স্থানান্তরিত হয়। এর কিছুদিন পর থেকে প্রায় ১০০ বছর ভবনটি জেলা রেজিস্ট্রি অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ২০০০ সালের ৩ অক্টোবর জেলা রেজিস্ট্রি অফিস যায় নতুন ভবনে। সেই থেকে এ ঐতিহাসিক ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এটি-সহ জজকোর্ট ভবন, জেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভার জলকল ভবন, পুলিশ সুপারের ভবন রক্ষার দাবিও জানিয়েছে জেলার নাগরিক সমাজ।

যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ বলেন, এ ভবনে বহু গুণী ব্যক্তি বিচারকাজ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এ ভবনের পাশে ছিল সূর্যঘড়ি। এখন পরিত্যক্ত ভবনটি সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি। নতুন প্রজন্মের সামনে প্রাচীন যশোরকে তুলে ধরতে এ ভবন সংরক্ষণ করা জরুরি।

জনউদ্যোগ যশোরের নেতা মাহাবুবুর রহমান মজনু বলেন, ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই আমরা রাজপথে নেমেছি। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনটি হাজার বছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আমরা যদি ঐতিহ্য রক্ষার কাজটি না করে যাই, পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

প্রেস ক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন বলেন, যশোরের প্রাচীন প্রশাসনিক ভবনসহ ৫টি ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করছে যশোরবাসী। ভবনগুলো সংরক্ষণ করার দাবি জানাচ্ছি। ভবনগুলো সংরক্ষণ হলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। এ বিষয়ে যশোর পৌরমেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী জলকল ভবন সংস্কার করে জাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংস্কার কাজ চলছে। নতুন প্রজন্মের সামনে পৌরসভার ইতিহাস তুলে ধরা হবে।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ যশোর। জেলার ঐতিহ্য রক্ষায় নাগরিক সমাজের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content