সারাদেশ

স্কুলশিক্ষার্থী ইমনের কাঁধে সংসারের বোঝা, ফুচকা বেচে ও রিকশা চালিয়ে আয়

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কবির স্মৃতিবিজড়িত বটতলায় তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ দুখুমিয়া বিদ্যানিকেতনে পড়াশোনা করত ইমন হাসান। কিন্তু সেখানে বেশি দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি দুঃখী এই ছেলের। কাজের ফাঁকে নিয়মিত ক্লাস করতে না পারায় স্কুলের নিয়মের কঠোরতায় স্কুল বদলাতে হয়। বর্তমানে সে পাশের আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে।

 

উপজেলার কালীর বাজার এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ছিল ইমনদের বাড়ি। বেশ কয়েক বছর আগে নদীভাঙনের শিকার হয়ে জমিজমা ও বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয় তারা। জন্মের পর আর কখনো বাবার আদর-স্নেহ পায়নি সে। বাবা হারানো ইমনকে তার মা ফাতেমা আক্তার অন্যের বাড়ি এবং মেসে মেসে কাজ করে কিছুটা বড় করেন।

 

নিজের পড়াশোনা চলাতে এবং মাকে সাহায্য করতে শিশু বয়সেই ইমন কাজে নেমে পড়ে। চা-স্টল, দোকান এমনকি মাছের আড়তেও কাজ করে সে। বর্তমানে ফুচকা বেচে এবং রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। মাকে নিয়ে খেয়েপরে বাঁচার পাশাপাশি ভালোভাবে পড়াশোনাটা চালিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে ইমন ও তার মা।

 

ইমন হাসান আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘জন্মের পর বাবাকে দেখিনি। শুনেছি বাবা মারা গেছেন। মা অন্যের বাসাবাড়ি এবং মেসে কাজ করে আমাকে মানুষ করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদে আমাদের জমাজমি, বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। নিরুপায় হয়ে শিশুকাল থেকেই বিভিন্ন কাজ করে মাকে সহযোগিতা করছি।

 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুচকা বেচি। বন্ধের সময় চালাই রিকশা। চেষ্টা করছি মাকে নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে এবং পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমার পড়াশোনা করে ভালোভাবে মানুষ হওয়ার স্বপ্নটা বেঁচে থাকত।

 

 

ইমনের মা ফাতেমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট লাগে, খারাপ লাগে ছেলের জন্য। প্রত্যেক মা-ই চায় তার সন্তান লেখাপড়া করে ভালোভাবে মানুষ হোক। কিন্তু আমার ছেলের অনেক ইচ্ছা থাকলেও সে সেই সুযোগ পাচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা সদরের প্রিন্ট বাজারের কর্ণধার জিম্মানুল আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইমন অনেক সৎ ও কর্মঠ ছেলে। আমি পরিবার নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে গেলে তার ফুচকার দোকান থেকেই ফুচকা খাই।

 

রমজানে ফুচকার দোকান বন্ধ থাকায় সে এখন রিকশা চালাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে সে অনেক সময় আমার কাছ থেকে টাকা ধার নেয় এবং সময়মতো পরিশোধও করে দেয়। এ অবস্থায় তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন হচ্ছে। কোনো সহযোগিতার আওতায় এলে তার জন্য ভালো হতো।

 

আরও খবর

Sponsered content