সারাদেশ

বগুড়ায় ধারের টাকা নিয়ে বিরোধ কুপিয়ে বন্ধুকে খুন

রেদোয়ান ও কাশেম স্কুল সহপাঠী। কাশেম তার বন্ধু রেদোয়ানের কাছ থেকে সাত মাস আগে ১১ হাজার টাকা ধার নিয়ে মোবাইল ফোন কেনে। এ টাকা ফেরত না দেওয়ায় কাশেমের কাছ থেকে ফোনটি নিয়ে নেয় রেদোয়ান। এর জেরে গত শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় রেদোয়ানকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুন করে কাশেম। বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাতাঞ্জা গ্রামের এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে কাশেমকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

 

নিহত রেদোয়ান ইসলাম (১৬) পাতাঞ্জা গ্রামের মিরাজুল ইসলামের ছেলে। সে এ বছর কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর এনায়েতউল্লাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। শুধু কাহালু নয়, কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ পুরো বগুড়া জেলাবাসী। খুন, মারধর, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানিসহ নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা।

মাসখানেক আগে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগায় শাজাহানপুর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হন এক কলেজছাত্র। ২৩ মার্চ শহরের কলোনি এলাকায় শান্ত নামে আরেক যুবক খুন হন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে।

 

শুধু শহরই নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ভয়াবহ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। জেলাজুড়ে এমন কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যাও কমপক্ষে ১৪টি বলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়। এর মধ্যে দুটি কিশোর গ্যাং আছে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায়, শহরের ফুলতলায় একটি, ফুলবাড়ী একটি, উপশহরে একটি, বৃন্দাবনপাড়ায় একটি, কলোনি ও খান্দার এবং সেউজগাড়ি এলাকায় একটি করে।  এ ছাড়া কাহালু, শেরপুর ও শাজাহানুপর উপজেলায় আছে ৫টি কিশোর গ্যাং।

 

গত বৃহস্পতিবার রাতে নিশিন্দারা উপশহর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা একটি বাসার ৫টি বৈদ্যুতিক মিটার ভাঙচুর করে। সেখানকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট জাহানুর রহমান জাকি কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

এর এক দিন আগে বৃহস্পতিবার শহরের গালাপট্টি এলাকায় জনসমক্ষে এক কিশোরকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় অপর পাঁচ কিশোর। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে তাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানা গেলেও পরে ওই কিশোরের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি। শহরের জলেশ্বরীতলায় কোচিংয়ে পড়তে যাওয়া ছেলেমেয়েদের নানাভাবে হয়রানি করে তারা।

 

কয়েক দিন আগে শহরের সেউজগাড়ি এলাকায় দু’দল কিশোরের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল বাজার এলাকা থেকে ৭ মার্চ হানিফুল ইসলাম হিরু ও তারেক আহম্মেদ নামের দুই সদস্যকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এরা এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল।

 

চাঁদা না দেওয়ায় মিনহাজ নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে তারা। দুই বছর আগে শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ও রাজারামপুর এলাকার বাসিন্দারা সমবেত হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। এর পর কিছুদিন থেমে থাকলেও আবারও কিশোর গ্যাং তৎপরতা শুরু করে।

 

র‍্যাব-১২ বগুড়ার কমান্ডার সুলিশ সুপার মীর মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, বগুড়ায় তুচ্ছ ঘটনায় কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ জন্য সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয় দায়ী। জেলা পুলিশ নিয়মিত বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ধর্মীয় উপাসনালয়ে গিয়ে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক প্রচারণা চালাচ্ছে।

 

আরও খবর

Sponsered content