সারাদেশ

জমকালো আয়োজনে সহায়হীন ১৫ জুটির বিয়ে হলো

জমকালো আয়োজনে সহায়হীন ১৫ জুটির বিয়ে হলো

সাত জন্মের বন্ধন হচ্ছে বিয়ে। ধনী-গরিব সবার সাধ জাগে ধুমধামে বিয়ে সম্পন্ন করতে। কারো সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না। গরিবের যেমন নুন আনতে পান্থা ফুরোয় তেমনি ভেঙে যায় স্বপ্ন। এমনই স্বপ্নকে হার মানিয়েছে দিন আনি দিন খাওয়া ঘরের ১৫ কন্যার বিয়ে অনুষ্ঠান। একইভাবে অসহায় বাবার ঘরের বররাও পেয়েছেন সমান সুযোগ।

 

মঙ্গলবার রাতে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে রংপুর শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামকে সাত রঙে রাঙানো হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে আসেন রংপুরের প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষজন। ইনডোর স্টেডিয়াম ভবনের সামনে ফুলে সজ্জিত গেট।

 

সিঁড়ি মাড়িয়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মেলে এক অন্যরকম মিলন মেলার। রাজকীয়ভাবে সাজানো মঞ্চে সারি করে বিয়ের পাঞ্জাবী, পায়জামা, জুতা, পাগড়ী পড়ে বসে আছে ১৫ জন বর। অন্য ঘরে বিয়ের সাজে ১৫ জন কনে। সবার হাস্যোজ্জ্বল মুখ।

 

মঞ্চের বিপরীতে বসে ছিলো ৩০ পরিবারের সদস্যরা। স্টেডিয়ামের বাইরে বর-কনের পরিবারসহ বিয়েতে আসা ৩ শতাধিক অতিথির জন্য আগে থেকেই আয়োজন করা হয়েছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, জর্দা পোলাওসহ নানা খাবারের।

 

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানো, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনে শামিল হন অতিথিরা। রংপুরে প্রথমবারের মত এমন সুসজ্জিত পরিবেশে এক সাথে ১৫ টি বিয়ের আয়োজনে করেছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন।

 

সেই সাথে নব-দম্পতিদের ভ্যান, সেলাই মেশিন, গ্যাসের চুলা, বালতি, প্লেট-গ্লাস, জগ, তোষকসহ সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র উপহার হিসেবে দেয়া হয়। ব্যতিক্রম এ আয়োজনের বিষ্ময় প্রকাশ করে আবেগঘন অনুভূতি জানান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর, রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল হাসান রুমি, বিসিবি’র পরিচালক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম, অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম দুলাল প্রমুখ। এছাড়া মহানগর কোতয়ালী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য আরিফুল হক রুজু, জুয়েল আহমেদ।

 

বর ও কনেরা বলেছেন, এধরণের বিয়ে দেখেছেন সিনেমা ও টেলিভিশনে। তাদের বাস্তব জীবনে ধুম আয়োজনে বিয়ে হবে তা ভাবতে পারেননি। এই বিয়ে তাদের মনোবাসনা পুরোন হয়েছে। নিজেদের পছন্দের কথা তুলে ধরে বলেন, বাবা মায়ের পছন্দেই তাদের বড় পছন্দ। সবার দোয়া নিয়ে সুখি হতে চান। কন্যাদের পর ঘর করতে বাবাদের বিষাদের সূরের পরিবর্তে চোখে ছিলো সুখের জল। কন্যা দায়গ্রস্ত বাবারা এই বিয়ের মাধ্যমে দায় মুক্ত হলেন।

 

আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে তাদের ফাউন্ডেশন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে।

 

রংপুরে প্রায় প্রতিবছর শীতে শীতবস্ত্র প্রদান, বন্যা ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, ঈদ ও রোজাকে কেন্দ্র করে খাদ্য সহায়তা প্রদান, করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়।

 

অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ঘটা করে এই যৌতুক বিহীন বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে যথাযথ সম্মান দিয়ে আনা হয়েছে বিয়ের আসরে।

 

আবার একইভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। সাথে প্রত্যেক দম্পতির জন্য এক ট্রাক উপহার থাকছপ। তারা যেন কোনভাবেই বুঝতে না পারেন সুবিধা বঞ্চিত তারা।

 

যদি বিত্তবানরা এভাবে একটি করে পরিবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে শীঘ্রই যৌতুক মুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে

 

আরও খবর

Sponsered content