খেলাধুলা

রেফারির ‘শত্রুতা’ জিততে দিল না রেয়াল মাদ্রিদকে

রেফারির ‘শত্রুতা’ জিততে দিল না রেয়াল মাদ্রিদকে

২০২৩ সালের মে মাসে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠ মেস্তায়ায় বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন রেয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকদের বর্ণবাদী গালি খেয়ে মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান তরুণ। পরে দেখেছিলেন লালকার্ডও। ম্যাচটা মাদ্রিদ হেরেছিল ১-০ গোলে। সে ম্যাচে মাদ্রিদের হার ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল ব্রাজিল উইঙ্গারের বর্ণবাদের শিকার হওয়া।

 

সে ঘটনার এতদিন পরে গতকাল শনিবার রাতে মেস্তায়ায় আরেকবার আতিথ্য নিয়েছিল কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা।

 

গত মৌসুমের দুঃসহ স্মৃতি একপাশে সরিয়ে জোড়া গোল করে মাদ্রিদের ত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভাব হয়েছেন ভিনিসিয়ুস।

 

ঘরের মাঠে ভ্যালেন্সিয়া শুরুতে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। ব্রাজিল তারকার দুই গোলে ভর করে এক পয়েন্ট পেয়ে মাঠ ছেড়েছে মাদ্রিদ।

 

নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচ শেষ হয়েছে ২-২ গোলে। এবারও ম্যাচের ফল ছাপিয়ে আলোচনায় বিতর্ক। তবে এবার তার উৎসমূল রেফারি নিজেই।

 

ম্যাচের শেষ মুহূর্তের খেলা চলছিল। সমতায় থাকা ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল মাদ্রিদ। ভিনিসিয়ুস-বেলিংহামরা।

 

একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছিল ভ্যালেন্সিয়ার রক্ষণে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগে ডানপ্রান্ত ধরে তেমনি এক আক্রমণে উঠেছিল মাদ্রিদ। ব্রাহিম দিয়াজের ক্রসে হেড দিয়ে বল জালেও পাঠিয়েছিলেন বেলিংহাম।

 

কিন্তু ক্রসের ঠিক আগ মুহূর্তে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজান রেফারি জেসুস মানজানো। এরপর মাদ্রিদ খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে মাঠেই ঘিরে ধরেন রেফারিকে।

 

জানাতে থাকেন প্রতিবাদ। বেলিংহাম একটু বেশি উত্তেজিত ছিলেন। রেফারি লাল কার্ড দেখিয়ে বসেন ইংলিশ মিডফিল্ডারকে।

 

অ্যাঙ্কেলের চোটে তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকা বেলিংহাম ভ্যালেন্সিয়া ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফিরেছিলেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনটা তিক্ত হলো তাঁর।

 

এদিকে মাদ্রিদের পয়েন্ট খোয়ানো আজ দুই কাতালান ক্লাব জিরোনা ও বার্সেলোনাকে শিরোপা দৌড়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ করে দিল।

 

কাল ম্যাচের শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছিল মাদ্রিদ। তবে আক্রমণে নিজেদের ছায়া হয়ে ছিলেন রদ্রিগো-ভিনিসিয়ুসরা।

 

উল্টো রক্ষণের ভুলে পিছিয়ে পড়ে আনচেলত্তির দল। ম্যাচের ২৭তম মিনিটে রিয়ালের রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে ভ্যালেন্সিয়াকে এগিয়ে দেন উগো দুরো। ৩ মিনিটের ব্যবধানে ভুল করে বসেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার দানি কারভাহাল।

 

গোলকিপার আন্দ্রিয়া লুনিনকে ব্যাক পাস দিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন কারভাহাল। লুনিনের কাছে বল যাওয়ার আগেই বল দখলে নিয়ে ভ্যালেন্সিয়ার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোমান ইয়ারেমচুক। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ভুলের ক্ষতিপূরণ দেন কারভাহাল। এ স্প্যানিশ রাইট ব্যাকের বাড়ানো পাস ধরে ব্যবধান কমান (২-১) ভিনিসিয়ুস।

 

বিরতির পরও চলতে থাকে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। দুদলই একাধিক সুযোগ পেয়েও গোলের দেখা পাচ্ছলি না। আনচেলত্তি দুটি পরিবর্তন নিয়ে আসেন। টনি ক্রুস ও রদ্রিগোর পরিবর্তে লুকা মদরিচ ও ব্রাহিম দিয়াজকে মাঠে নামান মাদ্রিদ বস। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে দিয়াসের ক্রস থেকে সমতাসূচক গোলটি করেন ভিনিসিয়ুস। যদিও ভ্যালেন্সিয়ার খেলোয়াড়েরা এ গোলে অফসাইডের দাবি তুলেছিলেন, কিন্তু ভিএআর রেফারির সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

 

ম্যাচের শেষ মুহূর্তেও ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ভিএআরকে। ম্যাচের যোগ করা সময়ে মাদ্রিদের বক্সে পড়ে গিয়েছিলেন উরো দুরো। রেফারি মানজানো পেনাল্টি দিয়েছিল ভ্যালেন্সিয়ার পক্ষে। তবে ভিএআর রেফারির সিদ্ধান্ত বদলে দেয়। এরপর রেয়ালকে আরেকদফা রক্ষা করেন লুনিন। তবে একদম অন্তিম মুহূর্তে বেলিংহামের গোল ও রেফারির শেষ বাঁশি ছাপিয়ে যায় সবকিছুকেই।

 

ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ড্রয়ের পরেও লা লিগার শীর্ষেই আছে রেয়াল। ২৭ ম্যাচে ২০ জয়ে ৬৬ পয়েন্ট আনচেলত্তির শিষ্যদের। এক ম্যাচ কম খেলে দুইয়ে থাকা জিরোনার পয়েন্ট ৫৯, তিনে থাকা বার্সার দখলে ৫৭ পয়েন্ট। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ ভ্যালেন্সিয়া ২৬ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে নয় নম্বরে আছে।