সারাদেশ

বিয়ে ও প্রেমের খেলায় মেতে শেষে ধরা এসআই রবিউল

বিয়ে ও প্রেমের খেলায় মেতে শেষে ধরা এসআই রবিউল

কাগজ-কলমে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদরঘাট থানায় ডিউটিরত। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিজের ইউনিটকে কৌশলে ব্যবহার করে খুলনায় চলে যান কনস্টেবল প্রেমিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। আবার বিষ খেয়ে অসুস্থ প্রথম স্ত্রীকে দেখতে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ডিউটিরত দেখিয়ে। এভাবে একের পর এক অপকর্ম করেছেন এসআই রবিউল হোসাইন।

 

রবিউলের বাড়ি কুমিল্লার বাঙ্গরাবাজার এলাকায়। এসআই পদে যোগদানের এক বছর না যেতেই প্রশিক্ষণরত অবস্থায় পাশের গ্রামের সাড়ে ১৬ বছরের খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। চাকরিবিধি ভেঙে এই বিয়ে করেছেন। বাল্যবিয়ের বিষয়টি এড়াতে কাবিননামা ছাড়াই বিয়ে করেন। রাখেননি কোনো দালিলিক প্রমাণ।

 

বিয়ের এক বছর না যেতেই ফারহানা তিশা নামে এক কনস্টেবলের প্রেমে পড়েন। ফেসবুকে তাদের পরিচয়। ডিউটিরত অবস্থাতেই প্রেমের টানে চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় ছুটে যান। সেখানে গিয়ে ফাঁদে পড়ে তিশাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন রবিউল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্রথম স্ত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলায় জেল খাটছেন কুমিল্লা কারাগারে। হয়েছেন সাময়িক বরখাস্ত। বিভাগীয় মামলার তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে খোয়াতে হবে চাকরি।

 

এই মামলায় ৫ ফেব্রুয়ারি রবিউলকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠান আদালত। কারাগারে যাওয়ার আগে সিএমপির দক্ষিণ বিভাগের সদরঘাট থানায় কর্মরত থাকলেও বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে দামপাড়া পুলিশ লাইন্স চট্টগ্রামে সংযুক্ত রয়েছেন।

 

সদরঘাট থানায় কর্মরত থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী খাদিজার মা নার্গিস আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লার বাঙ্গরাবাজার থানায় মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশের কাছে লিখিত জবানবন্দিতে রবিউল বলেন, ‘খাদিজাকে বিয়ে করিনি। এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। আমার প্ররোচনায় তার আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটেনি।

 

খাদিজার মা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘রবিউলের পরিবারের জোরাজুরিতেই অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হই। রবিউল তখন বলে, তার প্রশিক্ষণ চলছে, বিবাহের কাবিন করলে চাকরির ক্ষতি হবে। তার কথা বিশ্বাস করে কাবিন ছাড়া সাদা কাগজে উভয়ের স্বাক্ষর নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। শর্ত ছিল, খাদিজার ১৮ বছর পূর্ণ হলে রবিউলের প্রশিক্ষণ শেষে ৫ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হবে। বিয়ের পর মোটরসাইকেল কিনার জন্য আড়াই লাখ টাকা দেই। রবিউলের ফাঁদে পড়ে সবই হারালাম।

 

খাদিজার মামা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘খাদিজার বাবা দুবাই প্রবাসী। কলেজপড়ুয়া মেয়েকে আমিই বিয়ে দিয়েছি। রবিউল দ্বিতীয় বিয়ে করার খবর শুনে ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ গ্রাম্য সভা হয়। সেই সভায় ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে রবিউল বিয়ে করার কথা স্বীকার করে স্বাক্ষর করে।

 

দ্বিতীয় বিয়ে করার পর প্রথম স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন করে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে রবিউল। এমনকি আমাকে কুমিল্লায় ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একের পর এক প্রতারণা করে গেছে আমাদের সঙ্গে।

 

মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, রবিউল ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর খাদিজার সঙ্গে কাবিননামা ছাড়াই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট পুলিশ সদস্য তিশাকে বিয়ে করেন। ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় খাদিজা মোবাইলে ভিডিও কল দিয়ে রবিউলের সঙ্গে কথা বলার সময় উভয়ে তর্কাতর্কি শুরু করেন।

 

এক পর্যায়ে খাদিজা আত্মহত্যা করবে জানালে রবিউল বলেন, ‘তুই আত্মহত্যা করলে আমার কী আসে যায়।’ কথোপকথন চলার সময়েই খাদিজা বিষের বোতল দেখালে রবিউল তাকে আরও গালাগাল করতে থাকেন। পরে খাদিজা বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।

 

এই মামলা ছাড়াও রবিউলের বিরুদ্ধে সিএমপিতে একটি বিভাগীয় মামলার তদন্ত চলছে।

 

আরও খবর

Sponsered content