সারাদেশ

প্রতারকের প্রেমের ফাঁদে বাংলাদেশ দলের নারী ক্রিকেটার

প্রতারকের প্রেমের ফাঁদে বাংলাদেশ দলের নারী ক্রিকেটার

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তারের (১৭) দুটি আইফোন ও সাড়ে তিন হাজার ডলার চুরি হওয়ার ঘটনায় মো. আল আমিন দেওয়ান আযান নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার আল আমিন আরেক ক্রিকেটারের স্বামী। স্বর্ণার সঙ্গে স্বামীকে নিয়ে একই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তিনি।

 

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার ও তার সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনকালে তার দুটি আইফোন চুরি হয়। একইদিনে তার বাসা থেকে সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংকের চেক বই ও ভিসা কার্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে।

 

এ ঘটনায় ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি চুরির মামলা করেন। চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে র‍্যাব–১৩ ও র‍্যাব–২–এর একটি দল দিনাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার একমাত্র আসামি মো. আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযানকে গ্রেপ্তার করে।

 

এ সময় তার কাছে থেকে চুরি যাওয়া ৪টি আইফোনসহ ৫টি মোবাইল ফোন, প্রাইম ব্যাংকের একটি চেক বইয়ের পাতা, প্রাইম ব্যাংকের একটি মাস্টার কার্ড, বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, ৩টি হাতঘড়ি, ৪টি চেইন, ১টি নোজপিন, ১টি ব্রেসলেট, ২টি আংটি ও ১টি হ্যান্ডব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

 

আল–আমিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আল–আমিন মূলত প্রতারণার টার্গেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি খুলে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন এবং সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত বিভিন্ন স্টাইলে ছবি পোস্ট করতেন। টিকটকেও ভিডিও পোস্ট করতেন।

 

এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরবর্তীতে সেসব নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আস্থা অর্জন করে নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেন। অনেক ক্ষেত্রে কোনো নারীকে বিয়ে করে বা বিয়ে না করে সুবিধাজনক সময়ে তাঁদের নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে কৌশলে আত্মগোপনের জন্য অন্য এলাকায় চলে যেতেন।

 

একই লক্ষ্য নিয়ে আল–আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বর্তমানে ছুটিতে আছেন বলে কাপড়ের ব্যবসা করছেন, এমনটা বুঝিয়ে একজন নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হন। পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ জানুয়ারি আল–আমিন ওই নারী ক্রিকেটারকে বিয়ে করেন।

 

জাতীয় ক্রিকেট দলের নারী অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ওই নারী ক্রিকেটারসহ চারজন প্রায় তিন বছর ধরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। কৌশলে ওই নারী ক্রিকেটারকে বিয়ের সূত্র ধরে আল আমিন ওই ফ্ল্যাটে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে একটি আলাদা কক্ষে থাকতে শুরু করেন। প্রতারণার জন্য তিনি বাকিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ব্যবসাসহ নানা কারণ দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন সময় তাঁদের কাছ থেকে শিগগিরই পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা তার তিনজন রুমমেটসহ সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে রাজধানীর তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। এ সময় আল–আমিন বাসায় ছিলেন।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী অলরাউন্ডার স্বর্ণার কক্ষের ওয়ারড্রবের ড্রয়ারের তালা ভেঙে ডলার,১টি চেক বই, ভিসা কার্ড, অন্য নারী ক্রিকেটারের ব্যাগ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা তাঁদেরই ব্যবহৃত ব্যাগে করে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে তেজকুনিপাড়া খেলাঘর মাঠে আসেন। এ সময় অনুশীলনের ভিডিও করার কথা বলে অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত আইফোন নিয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুলে কৌশলে মাঠ থেকে পালিয়ে যান।

 

 

পরবর্তীতে আল আমিন স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত একটি আইফোন রাজধানীর একটি পুরোনো মালামাল বিক্রির মার্কেটে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাসে যোগে দিনাজপুরের উদ্দেশে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর গিয়ে রাতে হোটেলে অবস্থান করেন। পরদিন রংপুর থেকে দিনাজপুরে একটি হোটেলে অবস্থান করেন।

 

অনুশীলন শেষে স্বর্ণা আক্তার আল আমিনকে দেখতে না পেয়ে এক সতীর্থের মোবাইল থেকে তার মোবাইল দুটিতে ফোন কল করলে দুটিই বন্ধ পান। এরপর তারা বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের মূল দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। বাসার দারোয়ানের সহযোগিতায় তালা ভেঙে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে কক্ষের সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পান।

 

আল-আমিন ২০১১ সালে রাজধানীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করে। সে ইতোপূর্বে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। ২০১৬-২০১৭ সাল হতে নারীদের সঙ্গে প্রতারণাসহ অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি এবং প্রতারণার পর পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে চলে যেতো।

 

সে ২০২২ সালে প্রথম বিয়ে করে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে তার প্রতারণার বিষয়ে প্রথম স্ত্রী জানতে পারলে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এ ঘটনার পরও সে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রংপুর হয়ে দিনাজপুরে আত্মগোপন করেছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।

 

আল আমিনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় চারটির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি তিনবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন বলেও জানান র‍্যাবের মুখপাত্র।

 

আরও খবর

Sponsered content