আন্তর্জাতিক

মাটির তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ

মাটির তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ

মুসলিম সভ্যতার অন্যতম প্রধান নিদর্শন মসজিদ। যুগে যুগে পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে মুসলিমরা বসতি গড়ে তুলেছেন, সেখানেই নির্মাণ করেছেন মসজিদ। ইসলামের প্রাথমিক যুগে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সামাজিক নানা কার্যক্রম সম্পন্ন হতো এই মসজিদেই। অর্থাৎ মুসলিমদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই মসজিদ।

 

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত মসজিদের নির্মাণশৈলীতে ভিন্নতা ও বিচিত্রতা চোখে পড়ে। দেশ ও জনপদ ভেদে স্থানীয় মুসলিমদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, ঐতিহাসিক পরম্পরা আর নির্মাণ রীতির ভিন্নতার কারণে মসজিদগুলোর এই বৈচিত্র্য। আফ্রিকার দেশসমূহের মসজিদগুলোর নির্মাণশৈলীতেও আছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সেগুলোর মধ্যে মালির ডিজনি শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক মসজিদ ‘দ্য গ্রেট মস্ক অব ডিজনি’ অন্যতম। কারণ, এশিয়া কিংবা আরব অঞ্চলের মসজিদের গঠন প্রণালি থেকে এই মসজিদটির গঠন একেবারেই ভিন্ন। বলা চলে এটিতে আধুনিক প্রযুক্তির কোনো সুবিধাই রাখা হয়নি।

 

এই মসজিদের স্থাপত্যশৈলী এতটাই অভিনব যে, তা যে কাউকেই মুগ্ধ ও বিমোহিত করবে। মসজিদটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, বালি ও পানি। এজন্য এটি পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ হিসেবে। তবে এর দেয়ালের গাঁথুনি শক্ত করতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে ব্যবহার করা হয়েছে তাল গাছের গুঁড়ি। এটি নির্মিত হয় ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে। ইসলাম গ্রহণের পর মালির সুলতান কনবরু তার রাজপ্রাসাদ ভেঙে সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করেন।

 

নিজের বসবাসের জন্য মসজিদের পূর্ব দিকে তৈরি করেন একটি প্রাসাদ। তবে পরে উত্তরাধিকারীরা এই মসজিদের দুটি মিনার তৈরি করেন। পরে মসজিদটির চারপাশেও প্রাচীর তৈরি করা হয়। দেয়ালগুলোতে তাল গাছের কাঠ দিয়ে নকশা করা। শুধু নকশাই নয়, তাল গাছের কাঠগুলো মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যাতে সহজে তা ধসে না যায়।

 

পাশাপাশি মসজিদে রয়েছে শতাধিক মিনার সদৃশ ছোট ছোট কাঠামো। মধ্যযুগে এই মসজিদটি আফ্রিকার এ অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র ছিল। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কারকাজ চলে প্রতি বছর। মসজিদে প্রায় একসঙ্গে তিন হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।

 

মসজিদের দেয়াল এবং ছাদের ভার বহন করার জন্য ৯০টি মজবুত কাঠের কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য ছাদ এবং দেয়ালে একাধিক জানালা রয়েছে। প্রচণ্ড গরমের দিনেও মসজিদের ভেতরের পরিবেশ হিমশীতল ঠা-া থাকে। তবে বর্ষাকালে কিছুটা সমস্যা হয়। এই মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়াল ও ছাদ কিছুটা ক্ষতিগ্রন্ত হয়। এই কারণে প্রতিবছর এপ্রিল মাসে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মসজিদটির সংস্কার উৎসব পালিত হয়।

 

আরও খবর

Sponsered content