সারাদেশ

সরোজগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাটে এবার চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম

সরোজগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাটে এবার চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট জমে উঠেছে। শীতের এই সময়ে সপ্তাহের দু’দিন সোমবার ও শুক্রবারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে খেজুরের গুড় বেচাকেনা। তবে এবার এই হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি, কিন্তু সরবরাহ কম।

 

ফলে বাইরের জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে ক্রেতারা হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন। খেজুর গাছের সংখ্যা এবার কমে গেছে তাই গুড় উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে, বলছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে খেজুর গাছিরা তাদের গাছ কাটা ও রস সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে চলে যাচ্ছে মাঠে। মাঠের চারদিকের খেজুর গাছের মাথার উপর ঝুলছে রসের ভাঁড়। সেই রসের ভাঁড় গাছিরা গাছ থেকে নিচে নামানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার মাঠের মাঝখানে বা কৃষকের বাড়িতে রস আগুনের তাপে জ¦ালিয়ে তা থেকে তৈরি করা হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের খেজুরের গুড়। এই গুড় এবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাটে।

 

হাটের চারপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের হাক ডাকে মুখর হয় এই খেজুর গুড়ের হাট। সপ্তাহের দু’দিন শুক্রবার ও সোমবারে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এই হাটে এবার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। কৃষকরা তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। আবার অনেক খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি দেশে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।

 

এদিকে জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, গুড়ের চাহিদা পুরণ করা। সেই সাথে গাছ বৃদ্ধি করা। দেশে গুড়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারা যেন খজুর গাছের সংখ্যা বাড়ায়। একই সাথে গুড়ের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য।

হাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের গুড়ের হাটে প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার গুড় বেচা কেনা হয়। প্রতিবছর এই হাট থেকে বেচাকেনার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। এই হাটের গুড় দেশের জেলা গুলো মধ্যে ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ি, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহিসহ আরো অন্যান্য জেলায় এই গুড় সরবরাহ এবং বিক্রেতারও এই হাটে গুড় কিনতে আসে। এই হাটে গুড় বেচাকেনা করে কৃষক ও হাটমালিকরাও লাভবান হয়।

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি গাছ। আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০ টি গাছ, দামুড়হুদায় ৯ হাজার ২০০ টি গাছ, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০ টি গাছ। মোট এবার খেজুর গাছের সংখ্যা ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৬০ টি গাছ প্রস্তত করা হচ্ছে। এতে এবার গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা গুড়ের বিক্রির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবার এই গাছ প্রস্তুতে কর্মসংস্থান হয়ে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের।

 

পাবনা জেলা হাটে আসা ক্রেতা সাথে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের এই খেজুর গুড়ের হাটে এসে প্রায় ট্রাক ট্রাক গুড় কিনে নিয়ে যায়। এই হাটের গুড়ের চাহিদা ভালো তাই এতে আমরা লাভবান হয়। এই হাটের গুড় কিনে নিয়ে যায় অন্যহাটে বিক্রি করি। এতে আমরা লাভবান হয়। এখানের গুড়ের সুনাম আছে। প্রতিবার এই হাটের গুড় বিক্রি করে আমাদের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটায়। এখানের এই গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। সুনাম রয়েছে সারাদেশে। তাই চাহিদা বেশি এই গুড়ের।

 

অপর ক্রেতা রহমত আলি বলেন, এবার এই গুড়ের হাটে গুড়ের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু তুলনামূলক সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছি। খেজুর গাছের সংখ্যা এবার কমে গেছে। তাই গুড়ের চাহিদা পরিমাণ মতো সরবরাহ হচ্ছে না। কৃষকরা তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি দেশে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।

 

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট জমে উঠেছে। সপ্তাহের দু’দিন সোমবার ও শুক্রবারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাটে খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয়।

 

তবে এবার জানা গেছে যে হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়ানোর জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা ও গুড়ের চাহিদা মিটানোর জন্য। জেলার কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

আরও খবর

Sponsered content