সারাদেশ

টিকিট ছাড়া গান শোনাচ্ছেন মমতাজ

টিকিট ছাড়া গান শোনাচ্ছেন মমতাজ

একসময় করতেন পালাগান। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ির উঠানে, মাঠে বিভিন্ন ধর্মীয় ওরসে গান করতেন। অডিও ক্যাসেটেও সেরাদের সেরা হয়ে গেলেন। হয়ে উঠলেন ফোক গানের সেরা তারকা। অনেকে তাঁকে ‘ফোক সম্রাজ্ঞী’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

 

সেই শিল্পী আবার বাড়ির উঠানে যাচ্ছেন, গান শোনাচ্ছেন। কিন্তু দর্শকের কোনো টিকিট লাগছে না। শোনামাত্র অনেকে দৌড়ে আসছেন একনজর দেখতে, গান শুনতে। বিশেষ করে নারীরা এগিয়ে আসছেন, কথা বলছেন তাঁদের প্রিয় গায়িকার সঙ্গে। বয়স্করা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করছেন।

 

এই শিল্পী মানিকগঞ্জ-২ আসনে (হরিরামপুর-সিংগাইর-সদরের একাংশ) তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) মমতাজ বেগম। সকাল, দুপুর কি রাত, তিনটি উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। এবারও তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মমতাজ।

 

গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় সিংগাইর উপজেলার শায়েস্তা ইউনিয়নের চরশ্যামনগরে উঠান বৈঠক করেছেন মমতাজ বেগম। সেখানে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন নারী ভোটারের। তাঁদের একজন সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মমতাজ বেগমের গান শুনছি মেলা। আজ সামনাসামনি দেখলাম। কথাও কইছি। তিনি ভোট চাইলেন। মমতাজ এমপির সাথে আবার ভিলেন ডিপজলরেও দেখলাম।

 

মমতাজের দ্বিতীয় উঠান বৈঠক থেকে নাজমা বেগম নামের গৃহবধূ বলেন, ‘মমতাজের নাম শুইনাই চলে আইছি। আমগো কাছে ভোট চাইল। আবার গানও শুনাইল। “ও সুজন মাঝি নাইয়া” গান শুনাইল।উঠান বৈঠকে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আলট্রাসনোগ্রামে কবে বাচ্চা হইব, কেমন আছে—সব জানা যায়। আমগো প্রধানমন্ত্রী কে হইব? শেখ হাসিনা হইব। আর আমরা যদি প্রধানমন্ত্রীকে এ আসন উপহার না দিতে পারি কেমন হইব? এ আসন প্রধানমন্ত্রীকে আপনারা উপহার দেবেন।’ উন্নয়নের কথা তুলে ধরে মমতাজ বলেন, ‘এ আসনে এত উন্নয়ন হয়েছে, অবশ্যই নৌকায় ভোট দেবেন।

 

এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নে কয়েকটি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক করেছেন নৌকার প্রার্থী। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার রাজনীতি হলো মানুষের সেবা করা। আমি তো শিল্পপতি না। আমি শিল্পী মানুষ। গান গাই। গানের পয়সা দিয়েই যা পারি সেবা করার চেষ্টা করি।

 

এই গানের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চেনেন এবং আমাকে ভালোবাসেন। আর আমার ওপর আপনাদের দোয়া আছে বলেই আমার নেত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে আবার আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন।

 

ওই দিন রাতেই আবার ওরসে গিয়ে করেছেন গান। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের সট্টি গ্রামে ওরসে করলেন মায়ের গান। এর আগে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে ওরসে, বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুরে কীর্তনে, সদরের হাটিপাড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রচারণায়, উঠান বৈঠকে, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনে, পুটাইল ইউনিয়নে নির্বাচনী সভাসহ সিংগাইরেও বেশির ভাগ সভায়ই গান করছেন মমতাজ। তা ছাড়া হিন্দুধর্মালম্বীদের কীর্তনেও ধর্মীয় গান পরিবেশন করেছেন তিনি।

 

সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ সাহা বলেন, হরিরামপুরে পদ্মা ভাঙনরোধে বেড়িবাঁধ, সদর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর ওপর বালিরটেক সেতুসহ শত শত পাকা রাস্তা, স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ, এমপিওভুক্ত হয়েছে। তাই এই আসনের জনগণ নৌকাকে বেছে নেবেন।

 

এর আগে পুটাইল ইউনিয়নের নির্বাচনী সভায় গত ১০ বছরের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে শিল্পী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেসব এলাকায় নদী ভাঙে, সেসব এলাকার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ভাঙন রোধ করেছি।

 

শেখ হাসিনাকে কেন ভোট দেবেন, এমন প্রশ্ন করলে সেই প্রশ্নের উত্তরের অভাব এখন আর নাই। কারণ, এত পরিমাণ কাজ করেছি যে উন্নয়নের ধারাকে ঠিক রাখতে হলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প এ দেশে নাই।

 

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের ৫ মে মানিকগঞ্জ জেলার (সাবেক মহকুমা) সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপে মমতাজ বেগমের জন্ম হয়। তাঁর বাবা মধু বয়াতিও গান করতেন।

 

আরও খবর

Sponsered content