সারাদেশ

যে কারণে চবির সাবেক উপাচার্য শিরীণের পা ধরলেন ছাত্রলীগ নেতা

যে কারণে চবির সাবেক উপাচার্য শিরীণের পা ধরলেন ছাত্রলীগ নেতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের নিজ বাসভবনের নিচে পথরোধ করে চাকরির জন্য পায়ে পড়েন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মইনুল ইসলাম রাসেল। এই ভিডিও ফুটেজটিতে যে স্থান দেখানো হয়েছে তা চবির সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতারের চট্টগ্রাম শহরের কাজীর দেউরি লাইভলেন এলাকার বাসার নিচের। এতে দেখা যায় ছাত্রলীগের আরও কয়েকটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।

 

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার লিফটে করে বাসার নিচে নামলে লিফটের সামনে থাকা চবি ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপের নেতা উপাচার্যের পথরোধ করে।

এসময় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও একাকার গ্রুপের নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল চাকরির জন্য উপাচার্য শিরীণ আখতারের পায়ে পড়েন। একই সময়ে আরেক সহ-সভাপতি মুজিবর রহমান পায়ে পড়েন।

ওই সময় সেখানে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে নীল রঙের গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তিটি ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রপের নেতা ও সাবেক সহ-সভাপতি রোমেল হোসেন এবং সাদা শার্ট পরিহিত ব্যক্তিটি একই গ্রুপের নেতা ও সাবেক সহ-সভাপতি মুজিবর রহমান।

মইনুল ইসলাম রাসেল পায়ে পড়লে এ সময় সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতারকে বলতে শোনা যায়, আমার চাকরি দেয়ার ক্ষমতা নাই। আমার পা ছাড়ো।

এছাড়া তিনি তার বাসার নিচ থেকে চলে যেতে বলেন এবং পুলিশ ডাকবেন বলে জানান। শিরীণ আখতার গাড়িতে উঠে গেলে মইনুল ইসলাম রাসেল তার গাড়ির সামনে এসে পথরোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভিডিও ফুটেজটি গত ২০ মার্চের। শহরের কাজীর দেউরি লাইভলেন এলাকার বাসার নিচে সকালের দিকে এই ঘটনাগুলো ঘটে।

ওই সময় সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতার নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসছিলেন। আসার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার গাড়ির পথরোধ করে এবং খুবই অনুনয় বিনয় করে।

এর আগের দিন অর্থাৎ, ১৯ মার্চ নিজের শেষ দিনে এসেও উপাচার্য নিয়োগ দেয়া থেকে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেননি। সেদিন দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, হল ও দপ্তরে ৪০ জনের অধিক ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও একাকার গ্রুপের নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল বলেন, মেরিন সায়েন্সের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ভিসি অফিস ভাঙচুর এবং ট্রেন অবরোধের ঘটনা নিয়ে আমাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওই সময় উনার আমলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমাকে প্রধান দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত কমিটি করা হয়।

ওই তদন্ত কমিটি বাদ দেয়ার জন্য আমি সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর ড. শিরীণ আখতার ম্যাডামের কাছে গিয়েছিলাম এবং উনাকে মায়ের মতো অনুনয় বিনয় যেভাবে পারি, তার কাছে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যাওয়ার আগে যাতে তদন্ত কমিটি বাদ দেয়।

এখন উনার অবৈধ নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিউজ হওয়ায় উনি ছাত্রলীগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আমি যদি চাকরির জন্য যেতাম তাহলে ভিসিকে গত ১৯ মার্চ তার বাংলোতে আটকে স্বাক্ষর নিয়ে নিতে পারতাম। আমি যাওয়ার সময় আমার দুই বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে তারাও ম্যাডামকে একটু অনুরোধ করে।

গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগে পছন্দের প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ায় সাবেক সহ-সভাপতি মইনুল হক রাসেলের নেতৃত্বে উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর ও শাটল ট্রেন অবরোধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে প্রধান করা হয় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন ছাত্রদের আবাসিক আমানত হলের প্রাধ্যক্ষ নির্মল কুমার সাহা ও সহকারী প্রক্টর হাসান মোহাম্মদ রোমান। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সিন্ডিকেট সদস্য ও তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম তখন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তদন্ত কমিটির চিঠি এখনো তার হাতে পৌঁছায়নি। চিঠি পেলে বাকী সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।সার্বিক বিষয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে গতকাল থেকে কয়েকদফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোন সাড়া মেলেনি।

আরও খবর

Sponsered content