সারাদেশ

মোয়ায় স্বাবলম্বী সাইফুল, দিয়েছেন কারখানা

মোয়ায় স্বাবলম্বী সাইফুল, দিয়েছেন কারখানা

কুড়িগ্রামে হাতে বানানো মোয়া তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সাইফুল ইসলাম(৪৫)। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। পাশাপাশি এলাকার ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে তার কারখানায়। সাইফুলের বানানো মোয়ায় তিন উপজেলার মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এতে তার মাসিক আয় ৪০-৬০ হাজার টাকা।

 

সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের গোড়াই পিয়ার এলাকায়। তার পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণি ও মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম বাইসাইকেল ও রিকশার মেকানিকের কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতায় মেকানিকের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সংসারে শুরু হয় টানাপোড়েন। উপায় না পেয়ে ২০২০ সালে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন বাড়িতে মোয়া তৈরির কাজ।

 

শুরুর দিকে স্বামী- স্ত্রী দুজনে মিলে মোয়া তৈরির কাজ শুরু করেন। তবে বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় মোয়া তৈরির পরিধিও বাড়ান সাইফুল ইসলাম। এখন তার কারখানায় কাজ করছেন ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বড় হাঁড়িতে জমাট বাঁধা গুড় তাপ দিয়ে তরল করা হচ্ছে। তরল গুড়ে মুড়ি মিশ্রিত করে তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারীরা তৈরি করছেন মোয়া বা মলা। এসব মোয়া রাখা হচ্ছে পাশের একটি ঘরে।

 

সেখানে আবার ১০টি করে মোয়া দিয়ে করা হচ্ছে একটি করে প্যাকেট। এক প্যাকেট মোয়ার পাইকারি দাম ৩০ টাকা। প্রতিদিন ৩-৪ মণ মুড়ি ও এক মণ গুড় দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে ৮-১০ হাজার মোয়া বা মলা। তা বিক্রি করে শ্রমিক, পরিবহন ও অন্যন্য খরচ মিটিয়ে প্রতিদিন আয় করছেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

 

সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি গত তিন বছর ধরে মোয়া তৈরি করছি। আমার এখানে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। তাদের দিনে ২০০ টাকা পারিশ্রমিক দিই। আমারও দিন গেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হচ্ছে। মোটামুটি সংসারটা এখন ভালো চলছে।

 

তিনি বলেন, ‘আগেতো অভাব খুব ছিল। টাকা-পয়সা বেশি থাকলে আরও বড় পরিসরে কাজটি করতে পারতাম। আমার এখানে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মোয়া তৈরি হচ্ছে। এসব মোয়া আমি নিজেই পার্শ্ববর্তী তিনটি উপজেলায় বিক্রি করছি।

 

সাইফুল ইসলামের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, ‘আমার সংসার আগে অভাব ছিল। এখন আর অভাব নেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি। সামান্য কিছু জমিও বন্ধক নিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে মোয়া তৈরির কারখানা করার চিন্তাভাবনা আছে।

 

সাইফুল ইসলামের মোয়া তৈরির কারখানায় কাজ করছেন মাহমুদা খাতুন।তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকে এখানে কাজ করি। দিন ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। স্বামীর ইনকাম ছাড়াও এখানকার আয়ে সংসারে জোগান দিচ্ছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মন্টু মিয়া বলেন, ‘সাইফুল আগে মেকানিকের কাজ করতো। কয়েক বছর ধরে বাড়িতে মোয়া তৈরি করে বিক্রি করছে। এতে সে ভালোই লাভবান হচ্ছে।’

 

কুড়িগ্রাম বিসিকের উপব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, সাইফুল ইসলাম মোয়া তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে কুড়িগ্রাম বিসিক পাশে থাকবে।

 

আরও খবর

Sponsered content