সারাদেশ

প্লাস্টিকের দৌরাত্ম্যেও বাঁশ পণ্যে জীবিকার সংস্থান

প্লাস্টিকের দৌরাত্ম্যেও বাঁশ পণ্যে জীবিকার সংস্থান

বাঁশ ও কঞ্চি চিকন করে কেটে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাতের নিখুঁত ছোঁয়ায় ছোট ছোট ঝুড়ি তৈরি করছিলেন গৃহবধূ শাপলা বেদ। সংসারের কাজের পাশাপাশি বাঁশ সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে তিনি সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০টি ঝুড়ি ও সরপোশ তৈরি করতে পারেন। এগুলো বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে চলে সংসার। ঝিনাইদহের কয়েরগাছী আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বেদ বংশের অন্তত ২০টি পরিবারের এভাবে জীবিকার ব্যবস্থা হচ্ছে।

 

বাঁশের এ ধরনের পণ্যের চাহিদা থাকলেও প্লাস্টিকের দৌরাত্ম্যে কোণঠাসা পরিবারগুলো। সঙ্গে পুঁজির সংকটে পিছিয়ে আছেন বলে জানান রাজু কুমার ও আনন্দ কুমার। তাদের ভাষ্য, সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পের উন্নতি সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলাকায় প্রায় ৩০ জন কারিগর আছেন। তারা খেলনা কুলা, ডোল, হাতপাখা, ঝুড়ি, ভাত-তরকারি ঢাকার সরপোশ, মাছ ধরার খালুইসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করেন।

 

এক সময় সদরের তেঁতুলতলাসহ আশপাশের এলাকায় বেদে সম্প্রদায়ের মতো তাঁবুতে বসবাস করতেন বেদ বংশের মানুষ। ২০০৩ সালে কয়েরগাছী আবাসন প্রকল্পে আশ্রয় হয় তাদের। সম্প্রতি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের। এ বংশের মানুষের আদি পেশা বাঁশের সামগ্রী তৈরি।

 

কয়েরগাছী গিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বিশেষ ধরনের তল্লা বাঁশ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কেনেন। কয়েক বছর আগে ছিল গড়ে ৬০ টাকা। এ বাঁশ কেটে মসৃণ চটা তৈরি করা হয়। সেগুলো রোদে শুকিয়ে রং দেওয়া হয়।

 

ফের শুকালে ব্যবহারের পণ্য তৈরির উপযোগী হয় সেগুলো। এ পণ্যের চাহিদা থাকলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে লভ্যাংশ কমেছে। কুলা তৈরিতে খরচ হয় গড়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। এ ছাড়া ডালা ৩৫ থেকে ৪০, ডোল ১০, ঝুড়ি ২০ থেকে ৩০ ও পাখায় ৩০ টাকা খরচ হয়। ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা লাভে এগুলো বিক্রি করেন তারা।

 

এসব সামগ্রী চট্টগ্রাম ও ঢাকার ক্রেতারাও কিনে নেন। পাশাপাশি পরিবারগুলোর সদস্যরা বিভিন্ন গ্রাম, শহর ও চর এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করেন। প্রতি শুক্রবার কালীগঞ্জের হাটে বিক্রি হয়। তারা জানান, সারা বছর এসব সামগ্রী বিক্রি হলেও চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে চাহিদা থাকে বেশি। তখন বেশি লাভ করেন।

 

১২ বছর ধরে এ কাজে যুক্ত আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাপলা বেদ। তিনি বলছিলেন, বাঁশের সামগ্রী বিক্রির আয়ে সংসার চলে। বড় মেয়ে অপর্ণা বেদকে পড়াচ্ছেন স্থানীয় স্কুলে। আরেক নারী ঝিলিকের ভাষ্য, এসব সামগ্রী তৈরির পর বাড়ির পুরুষ সদস্যরা বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন।

 

প্লাস্টিকের কারণে এ পেশা কিছুটা সংকুচিত হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বলেন, আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের যাযাবর জীবনের অবসান হয়েছে। এখানে থেকেই তারা বাঁশের সামগ্রী তৈরি করছেন। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাদের জীবিকার উৎস ধরে রাখার পাশাপাশি কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

 

গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আরিফুল ইসলাম। তাঁর কথায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য ঋণ দেওয়ার। বেদ সম্প্রদায়ের কাজকে ছোট উদ্যোক্তা বলা যায়। তাদের জন্য জামানতবিহীন ঋণের নির্দেশনা রয়েছে। তারা চাইলে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

 

আরও খবর

Sponsered content