আইটি বিশ্ব

ফ্রিল্যান্সার রেজুয়ানের গ্রামে বসে মাসে আয় ৫০ লাখের ওপরে

ফ্রিল্যান্সার রেজুয়ানের গ্রামে বসে মাসে আয় ৫০ লাখের ওপরে

স্কুলজীবনেই প্রযুক্তির নেশায় বুঁদ হয়েছিলেন রেজুয়ান আহমেদ রাব্বি। তাই বিনা পারিশ্রমিকেই কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারী হয়ে শিখেছেন ইন্টারনেট ব্রাউজিংসহ নানা কাজ। পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হয়ে ডোল্যান্সারের পিছু নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ২০১৪ সালে গুগল অ্যাডসেন্সে যুক্ত হয়ে উপার্জনের মুখ দেখেন রাব্বি। প্রথমে পাঁচ ডলার আয় করলেও বর্তমানে মাসিক আয় ৫০ হাজার ডলারের অধিক, যা টাকার মূল্যমানে দাঁড়ায় ৫০ লাখের ওপরে।

 

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নাম পালবাড়ি। বংশাই নদের পাড়ে ছায়াঘেরা নিভৃত পল্লিতে বেড়ে উঠেছেন রাব্বি। অভাবের সংসারে উপার্জনক্ষম রাব্বির বাবা ছিলেন বাসচালক। তিন ভাইবোনের বড় রাব্বি মধুপুর রানী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১১ সালে ভর্তি হন সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে বাড়িতে এসে পুরোদমে হয়ে ওঠেন ফ্রিল্যান্সার।

 

যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হলেন

২০১০ সালে এসএসসি পাসের পর সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন রেজুয়ান। সিলেটের এক ব্যক্তির পরামর্শে ডোল্যান্সারে যুক্ত হন।

 

সেখানে ৮ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে কাজ শুরু করলে প্রতি ক্লিকেই আসবে টাকা। সেই টাকা পকেটে আনতে প্রয়োজন ল্যাপটপ আর আট হাজার টাকা। পরিবার থেকে সেই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন রাব্বি।

 

অবশেষে রাব্বির বাবা আব্দুল মতিন জমি বিক্রি করে কিনে দেন ল্যাপটপ। জোগান দেন প্রাথমিক পুঁজির আট হাজার টাকা। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় প্রতি ক্লিকে ক্ষতি বাড়তে থাকে। ডোল্যান্সারের বিধি অনুসরণ করতে করতে দুই লক্ষাধিক টাকা ঋণী হয়ে পড়েন। হতাশায় দৈনিক ১০০ টাকা ভিত্তিতে পার্টটাইম কাজে যুক্ত হন রাব্বি। বাড়ি থেকে বিষয়টি জানতে পেরে সেই ঋণ পরিশোধ করেন তাঁর বাবা আব্দুল মতিন।

 

২০১৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে বাড়ি ফেরেন রেজুয়ান। বাড়িতে এসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন। রাতদিন চেষ্টার পর গুগল অ্যাডসেন্সে’র কাজে যুক্ত হয়ে ডলারের মুখ দেখেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বৈদেশিক কাজের চাপে প্রথমে দুজন কম্পিউটার এক্সপার্ট নিয়োগ দেন তার প্রতিষ্ঠানে। ২০১৮ সালে এসে কাজ ও আয়ের গতি দুই বেড়ে যায়।

 

বর্তমানে ৬০ জনের বিশাল পরিবারের নাম রাব্বি আইটি ফার্ম। তাঁদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কম্পিউটার। ওই কম্পিউটারের মাধ্যমেই বিদেশি গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে ওয়েবপেজ ডেভেলপিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও, লোগো ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজিংসহ নানামুখী কাজ করেন রাব্বিসহ তাঁর সহকর্মীরা।

 

তাঁর বৈদেশিক আয়ে তৈরি করা মনোমুগ্ধকর আধুনিক ডিজাইনের অফিসে কর্মরতদের বেতন ভাতা, ডমিয়েন, হোস্টিংক্রয়সহ নানামুখী মাসিক ব্যয় ২০ লক্ষাধিক টাকা। আর মাসিক আয় ৫০ হাজার ডলারের ওপরে, যা টাকার মূল্যমানে ৫০ লক্ষাধিকের ওপরে। তাঁর দেখানো পথে এখন অনেকেই স্বাবলম্বী। নিজেও কিনেছেন বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট। অর্জন করেছেন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিতি কার্ড। পেয়েছেন রেমিট্যান্স সনদপত্র।

 

বিশ্বজোড়া কর্মক্ষেত্রে রেজুয়ান আহমেদ রাব্বির

রেজুয়ান আহমেদ রাব্বি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়া মানে নিজেকে বিশ্বমানের যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা। ঘরে বসে বিশ্ববাজারে বেকার যুবকেরা যুক্ত হলে দেশ ও পরিবারের সফলতা আসবে দ্রুত। এর জন্য প্রয়োজন কম্পিউটার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং বেইজড কাজের দক্ষতা এবং ইংরেজি জানা। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি একাগ্রতা আর ধৈর্য। এর মধ্য দিয়েই বেকার যুবক হয়ে উঠতে পারবে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে।’

আরও খবর

Sponsered content