রাজনীতি

বিএনপির মহাসমাবেশে টিকিট মিলছে না ঢাকায় আসার

বিএনপির মহাসমাবেশে টিকিট মিলছে না ঢাকায় আসার

ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর। রাজনীতির মাঠে আলোচনা শুধুই দিনটিকে ঘিরে। প্রথমে বিএনপির মহাসমাবেশের ঘোষণা। তারপর মতিঝিলে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইদিন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগও। শুধু রাজধানী নয় টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে ২৮ অক্টোবর।

 

এদিকে তিন বড় দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীমুখী চাপ বেড়েছে দলগুলোর সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় চলে এসেছে। অন্যরা ঢাকায় আসতে গণপরিবহনের অগ্রিম টিকেট পেতে ভিড় করছেন জেলা ও মহানগরের বাস, ট্রেন ও লঞ্চ কাউন্টারগুলোতে। এরই মধ্যে জানা গেল, ২৬-২৭ তারিখের ঢাকামুখী সব গণপরিবহনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। দেশের সবগুলো বিভাগের গণপরিবহনের টিকিট কাউন্টারগুলোতে খোঁজ-খবর নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন কালবেলার ব্যুরো প্রধানরা।

 

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে যায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, গোধুলী, তূর্ণা নিশিতা, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ওয়ান আপ (ঢাকা মেইল), কর্ণফুলী এক্সপ্রেস। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুর্গোৎসব এবং ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এসব ট্রেনের আসন খালি নেই।

 

আগামী ২৬,২৭,২৮ অক্টোবরের ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশন মাস্টার জাফর আলম। তিনি কালবেলাকে বলেন, এখন যাত্রার ১০ দিন আগে ট্রেনের টিকিট অনলাইন এবং স্টেশনে ছাড়া হয়। ছাড়ার সাথে সাথেই যাত্রীরা টিকিট কেটে নেন। এ তিন দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যেসব ট্রেন যাওয়ার কথা সেগুলোর সিট খালি নেই। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যাত্রীর চাপ বেশি বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি আছে।

 

অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সড়ক রুটে ২৮ অক্টোবররের টিকিট বিক্রি হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের টিকিটের চাহিদা রয়েছে।

 

চট্টগ্রাম নগরের দাম পাড়া, একে খান, কর্ণেলহাটসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বাস কাউন্টারের ম্যানেজার কালবেলাকে বলেন, ২৮ অক্টোবরের একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের টিকিটের চাহিদা রয়েছে। এভাবে হলে নিরাপত্তার জন্য ২৮ অক্টোবর বাস বন্ধ রাখা ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না।

 

রাজশাহী

আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাওয়া নিয়ে যানবাহনে বাড়তি কোনো চাপ নেই। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ট্রেনের টিকেট শেষ হয়ে গেছে। মহাসমাবেশ ঘিরে দূর পাল্লার যানবাহন বন্ধেরও কোনো পরিকল্পনা কিংবা আশঙ্কা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও দূর পাল্লার বিভিন্ন বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২৬ ও ২৭ তারিখে ট্রেনের কোনো টিকেট নেই। ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের রাজশাহী-ঢাকা রুটে ট্রেনের টিকেট ১৬ ও ১৭ অক্টোবরই শেষ হয়ে গেছে।

 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘৫০ শতাংশ টিকেট অনলাইনে দেওয়া হয়। আর বাকি ৫০ শতাংশ টিকেট দেওয়া হয় কাউন্টার থেকে। সাধারণত অনলাইনে টিকেট যাত্রার ১০ দিন আগে দেওয়া হয়। আর টিকেট থাকা সাপেক্ষে কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়া হয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই অনলাইন ও অফলাইনে ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের কোনো টিকেট নেই।

 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘ট্রেনে বাড়তি কোনো চাপের সুযোগ নেই। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে ট্রেন।

 

এদিকে দুপুরে দূরপাল্লার রাজশাহীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটের বাসে বাড়তি কোনো টিকেট ক্রয়ের চাপ নেই। অধিকাংশ বাস কাউন্টারে এখনো ২৬ ও ২৭ ‍অক্টোবরের টিকেট মিলছে।

 

রাজশাহী গ্রামীণ ট্রাভেলসের কাউন্টারেরর টিকেট মাস্টার মো. খালিদ বলেন, ‘ওইভাবে টিকেটের কোনো চাপ আমরা দেখছি না। স্বাভাবিকভাবে যেভাবে টিকেট বিক্রি হয় সেভাবেই হচ্ছে। এখনো ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের পর্যাপ্ত টিকেট রয়েছে।

 

রাজশাহী দেশ ট্রাভেলস’র কাউন্টার মাস্টার মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘বাড়তি চাপ নেই এটি বলবো না। বিএনপির সমাবেশের তো এখনো বেশ কয়েক দিন বাকি। তাছাড়া পূজোর ছুটি চলছে। তবে সমাবেশের আগে দূরপাল্লার বাস বন্ধের একটি আশঙ্কা থাকে। সেই আশঙ্কা থেকেই হয়তো বিএনপি নেতাকর্মীরা এখনো টিকেট কাটছে না। তবে ২৮ তারিখের আগে পর্যাপ্ত টিকেট রয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সহ-সভাপতি মো. নুরুজ্জামান মোহন বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। স্বাভাবিকভাবে দূরপাল্লার বাস চলবে। বিগত দিনগুলোতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বাস বন্ধের আমাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে দূরপাল্লার বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা উপর থেকে নেই।

 

খুলনা

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, খুলনায় ২৬ & ২৭ অক্টোবরের টিকিট মাত্র ২-৫টা সিট ফাঁকা আছে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবরের ৬৫টি সিট ফাঁকা আছে। খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, ২৮ তারিখে বিএনপির সমাবেশ বা অন্য কোনো কারণে খুলনা থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকবে না। সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে।

 

বরিশাল

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন (যাপ) সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবরের আগে বা পরে লঞ্চ চলাচল বন্ধের কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই। স্বাভাবিক নিয়মেই লঞ্চ চলবে। তবে ২৮ অক্টোবর ঘিরে লঞ্চে আগাম টিকিট বিক্রি যেমন হয়নি, তেমনি বিএনপি বা কেউ লঞ্চ রিজার্ভের জন্যও যোগাযোগ করেনি।

 

অপরদিককে, বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে এমনেতেই যাত্রীদের চাপ সবসময়ের জন্য। তাই নিয়ম অনুযায়ী বাস চলাচল করছে। আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে বাস চলাচল বন্ধের তেমন সম্ভাবনা দেখছি না। তাছাড়া বিএনপির সমাবেশে যেতে কোর নেতাকর্মী বাস রিজার্ভও নেননি বলে জানান তিনি।

 

সিলেট

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, বাসের টিকিট বিক্রি চলমান। আমাদের সিলেটের বাস চলাচল থাকবে। সিলেট রেলওয়রে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, আজ থেকে আগামী ৩১ তারিখ পর্যন্ত সিলেট স্টেশনে ট্রেনের কোন টিকেট নেই।

 

রংপুর

পঞ্চগড় স্টেশন মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন পঞ্চগড় থেকে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় তিনটি ট্রেনে মোট ৪০০ টিকিট বরাদ্দ আছে আজ ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ট্রেনের সমুদয় টিকিট বিক্রি হয়েছে তবে স্থানীয়ভাবে আর পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর পার্বতীপুর গাইবান্ধা বিরল টাঙ্গাইল এই সমস্ত টিকিট পর্যাপ্ত আছে এছাড়াও সরকার যদি মনে করে তাদের প্রয়োজনে ট্রেনের বগিসংযোগ ও টিকিট বৃদ্ধি করে দিতে পারে।

 

এদিকে মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন পঞ্চগড় জেলা থেকে প্রায় ৭৫ এই সমস্ত গাড়িতে থেকে ৮০টি গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে প্রতিদিনেই ছেড়ে যায় এই গাড়িগুলোতে ২৭ তারিখ পর্যন্ত অধিকাংশ টিকিটেই বিক্রি হয়ে গেছে এবংএখন পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ রাখা আর কোন সিদ্ধান্ত আমাদেরকে দেয়নি তাই আমরা টিকিট বিক্রি করতেছি।

 

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ জেলা মটর মালিক সমিতির মহাসচিব মহাসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ২৮ তারিখ গাড়ি বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই। ওইদিন স্বাভাবিকভাবেই বাস কম চলবে। কারণ অনেক মালিক আছেন যারা ভয়েই গাড়ি চালাতে চান না। তবে যারা গাড়ি চালাতে চান তাদের জন্য মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সকল প্রকার কর্মপরিকল্পনা পরিচালনা করা হবে।

 

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিটেনডেন্ট নাজমুল হক খান কালবেলাকে বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকাগামী কোনো ট্রেনের আসন খালি নেই।’ এমনকী অনলাইনে ঢুকেও দেখা গেছে, ট্রেনের কোনো টিকিট নেই।

 

২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে ডিএমপি ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ কালবেলাকে বলেন, ঢাকা শহরে এক সময় একাধিক রাজনৈতিক দল সমাবেশ করতে পারত না। কিন্তু বর্তমানে একই দিনে তিন চারটি সমাবেশ হচ্ছে, প্রত্যেকটি সমাবেশস্থলে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। অতীতে বড় বড় সমাবেশ হয়েছে, কোথাও কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। আগামী ২৮ অক্টোবর কোনো নাশকতার আশঙ্কা নেই। আমরা আশা করি কোনো কিছু ঘটবে না। ডিএমপি কমিশনারের অনুমোদিত সমাবেশে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেব। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, ঢাকায় আমাদের চেকপোস্ট চলবে, অভিযান চলবে, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারে আমাদের রুটিন কাজও চলমান থাকবে।

 

আরও খবর

Sponsered content