সারাদেশ

যেভাবে চাষীদের ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলো চক্র

যেভাবে চাষীদের ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলো চক্র

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বিসিকের লবণ চাষের প্লট লিজের লটারী ফরমে মূল্য ১০০ টাকা লেখা থাকলেও চাষীদের গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে গড়ে ১৫০ টাকা বেশি নিয়ে প্রায় ৪ হাজার চাষীর কাছ থেকে কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ঠরা। উপজেলা বিসিকের কেন্দ্র প্রধান জাকির হোসেনের নির্দেশে ও পরিষদের খরচের জন্য এই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

 

কুতুবদিয়া উপজেলা, বিসিক, লবন শিল্প কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ও ভোক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শতকে ৫০০ টাকা রাজস্ব দিয়ে উন্নতমানের লবণ প্রদর্শণী ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের জন্য উপজেলার ১১৩ একর জমি সরকারে কাছ থেকে লিজ নেয় বিসিক। কিন্তু সেই জমিতে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা না করে চাষীদের কাছে লিজ দেওয়া শুরু করে।

 

বিগত ৬/৭ বছর আগে থেকেই ১২০ শতক করে ১১৩ একর জমিকে ৬৮টি প্লটে ভাগ করা হয়। এরপর শুরু হয় লিজ দেওয়া। তবে লিজের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা আসায় গেল বছর থেকে লটারীর মাধ্যমে চাষীদের ১ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পন্থা বেছে নেয় বিসিক।

 

এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে প্লটের লটারী ফরম উপজেলার ৬ টি পরিষদ থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়। কিন্তু সেই ফরম বিক্রি করতে গিয়েই ১০০ টাকার স্থলে ইউনিয়ন পরিষদগুলো নিচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরমধ্যে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদ চাষীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করেছে। লেমশখালী,বড়ঘোপ কৈয়ারবিল ইউপি আদায় করেছে ২৫০ টাকা। তাছাড়া দক্ষিণ ধুরুং ও উত্তর ধুরুং ইউপি সর্ব্বোচ ৩০০ টাকা করে আদায় করেছে। গেল বছর উপজেলার ৩ হাজার চাষী লটারিতে অংশগ্রহন করলেও এবার ইতিমধ্যেই ৬ ইউপি থেকে ৪ হাজারের বেশি লবণ চাষী ফরম সংগ্রহ করেছেন।

 

এ বিষয়ে লবণ চাষী সাইফুল হক বলেন, লবন চাষের প্লট পেতে আমি কৈয়ারবিল চাষীদের ৬ লাখ টাকা কার পকেটে ইউপি থেকে একটি বিসিকের ফরম সংগ্রহ করেছি। ফরমে মূল্য লেখা রয়েছে ১০০ টাকা। কিন্তু আমার কাছ থেকে নুরুল বশর ২৫০ টাকা নিয়েছে। সেসময় পাশে শফিউল আলম মেম্বার ছিলেন। সেসময় আমি বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পরিষদ থেকে আমাকে জানানো হয় পরিষদের নির্দেশ।

 

নুরুল বশর নামের আরেক চাষী বলেন, লেমশখালী ইউনিয়ন পরিষদও ১০০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা নিচ্ছে। বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণ হিসেবে পরিষদ জানিয়েছে ফরম বাবদ ২০০ টাকা বিসিককে দিয়ে দিতে হবে। বাকি টাকা পরিষদের খরচ।

 

এবিষয়ে আলী আকবর ডেইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার ১০০ টাকার বদলে ২০০ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিসিক থেকে ফরম ২০০ টাকা বিক্রি করতে বলা হয়েছে। তবে কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যন আজমগীর মাতাব্বর, উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, ফরম বিক্রির ২’শ টাকা বিসিকের জাকির হোসেনকে দিতে হয়। বাকি টাকা ইউনিয়ন পরিষদের খরচ।

 

কিন্তু কুতুবদিয়া বিসিকের কেন্দ্র প্রধান জাকির হোসেন বলেন, ফরম তো বিসিক বিক্রি করেনি। করেছে ইউনিয়ন পরিষদ । তারা কেন বেশি নিয়েছে তারা জানেন৷ তবে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে আপাতত ফরম বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এবিষয়ে বিসিকের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ- মহাব্যবস্থাপক মো.জাফর ইকবাল ভুইয়া বলেন,আগে বিসিক থেকে ফরম দেয়া হত। কিন্তু আমাদের অফিস লেমশখালী হওয়ায় দূরের চাষীদের সমস্যা হত। তাদের সমস্যার কথা চিন্তা করে এবছর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফরম বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিতরণের শুরুতেই নানাভাবে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফরম ফেরত এনে আমাদের অফিস থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি করছি।

 

তিনি আরো বলেন,পরিষদ থেকে কত ফরম বিক্রি হয়েছে আমার জানা নেই। লবণ চাষীরা বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করেনি। যদি তাঁরা লিখিত অভিযোগ করে তবে বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।