রাজনীতি

সরকার ভারতের সহায়তায় গণতন্ত্রকামী জনগণকে বন্দি করে রেখেছে বললেন রিজভী

ভারতের সহায়তা নিয়েই সরকার দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের একদিন আগে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বিএনপির উত্তরার কয়েকটি থানার সদ্য কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রিজভী এই অভিযোগ করেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা (সরকার) দেশের মানুষের হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পারেননি, আপনারা শুধু পার্শ্ববর্তী দেশকে খুশি করার জন্যই কথা বলেন।

 

আপনারা যে কত ভণ্ড, কত আত্মপ্রবঞ্চক, এটা দেশবাসী জানে। এজন্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেন না, এজন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেন না, এজন্য জনগণের সমস্ত নাগরিক স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারকে আপনারা আজকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন।

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজ দেশের আইন-আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ-র‌্যাব সব কিছু আপনাদের হাতের মুঠোয়, সব কিছু আপনারা কুক্ষিগত করে রেখেছেন, কোথায়ও কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সব আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ছাতার নিচে আপনারা বন্দি করে রেখে; শুধু বিএনপি নয়, এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে আপনারা বন্দি করে রেখেছেন; শুধু পার্শ্ববর্তী দেশের সহায়তা নিয়ে।

 

‘এবার আমরা বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ করব’আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব এরকম কথা বলতে লজ্জা করল না।

 

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকরতম সাম্প্রদায়িক শক্তি এখন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির বানিয়েছে। এটা কি মিথ্যা নাকি সত্য? সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি যারা ভারতের রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, একমাত্র তারা আপনাদের (সরকার) সমর্থন জানিয়েছে।

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তাদের একজন কূটনীতিক বলেছেন যে, ইন্ডিয়ার চাপে… ইন্ডিয়ার কর্মতৎপরতায় আমেরিকার রাষ্ট্রদূত নাকি চুপ হয়ে গেছেন, পালিয়ে গেছেন… এরকম একটা শব্দ ব্যবহার করেছেন।

 

এতো বড় সাম্প্রদায়িক শক্তি যারা ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায়…. তাদের সাথে আপনাদের সখ্যতা, তাদের সাথে আপনাদের বন্ধুত্ব… আপনার একজন সাবেক মন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের সাথে নাকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। আর আপনারা এখন বলেছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দেশ থেকে নাকি তাড়াবেন।

 

উত্তরার দিয়াবাড়ির ‘ফ্যান্টাসি আইল্য্যান্ড’এ হাজী মো. মোস্তফা জামানের উদ্যোগে ঢাকা মহানগর উত্তরের ৭টি থানার কারা নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সম্মানে এই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের ঘটনার উত্তরার ৭টি থানার গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মী যারা কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছে তারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

 

‘ইসরায়েলের সাথে তলে তলে সম্পর্ক’

রিজভী বলেন, ইসরায়েল যখন হামাসের ওপর আক্রমণ করছে… নির্বিচারে বোমের আঘাতে শিশুরা আর্তনাদ করছে। এই সরকারের প্রধান খুব তখন তাদের পক্ষে বললেন, খুব মায়া কান্না কাঁদলেন। আবার ইসরায়েলের বিমান এখানে (ঢাকায়) নেমেছে কেনো? এই রহস্য কি? আমরা অনেক কথাই শুনি। বিরোধী দলের কথা-বার্তা মোবাইলফোন থেকে টেপ (রেকর্ড) করার জন্য নাকি যন্ত্র কেনা হচ্ছে ইসরায়েল থেকে। আর মায়া কান্না দেখাচ্ছেন… এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক ভণ্ডামির নমুনা।

রিজভী বলেন, অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে শেখ হাসিনার। তা না হলে ওদের (ইসরায়েল) সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক নাই। আমাদের পাসপোর্টে লেখা ছিল সব দেশে ভ্রমণ করা যাবে এক্সসেপ্ট ইসরায়েল…ইসরায়েল ছাড়া প্রত্যেকটা দেশে ভ্রমণ করতে পারবে বাংলাদেশিরা।

 

এখন সেটা তুলে দিয়েছে… সে মুখে বলছে বাংলাদেশেরে কূটনৈতিক সম্পর্ক নাই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী…ওই যে তাদের একজন মন্ত্রী বলেছেন না যে, তলে তলে সব ঠিক করে…তলে তলে ঠিকই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মধ্যে উনি (শেখ হাসিনা) জড়িত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আজ দুর্বল করার জন্য, দুর্বল করে প্রভুদেরকে খুশি রেখে উনি বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে রাখতে চান…এটাই তার অভিপ্রায়।

 

রিজভী বলেন, আমাদের যে লড়াই, জাতীয়তাবাদী শক্তির যে লড়াই, গণতন্ত্র স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে লড়াই, এই লড়াই শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান, মহান স্বাধীনতার ঘোষক। এদেশের মহান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অসীম সাহসী নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেো জিয়া সব সময় সোচ্চার থেকেছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে।

 

এখন সেই পতাকা শক্তভাবে ধারণ করেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।

 

অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মো. মোস্তফা জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, সদস্য আলাউদ্দিন সরকার টিপু, এবিএম আবদুর রাজ্জাক, আহসান হাবিব মোল্লা, হাজী মো. ইউসুফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

 

আরও খবর

Sponsered content