সারাদেশ

কালবৈশাখী কেড়ে নিল ১১ প্রাণ

দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের মধ্যে হঠাৎ বর্ষণ জনমনে সাময়িক স্বস্তি দিলেও বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী কেড়ে নিয়েছে ১১ প্রাণ। আহত হয়েছেন অনেকে। শুধু হতাহতই নয়, গতকাল রোববার সকালে ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছগাছালি। লুটিয়ে পড়েছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। দমকা হাওয়া কোথাও কোথাও আঘাত হানে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে। আশ্রয়স্থল আর সম্বল হারিয়ে এখন দিশেহারা অসংখ্য মানুষ। কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেক গ্রাম এখনও ভূতুড়ে।

 

ঝড় আর বজ্রপাতে ঝালকাঠিতে তিনজন, পটুয়াখালীর বাউফল ও ভোলায় দু’জন করে, যশোর, খুলনা, নেত্রকোনা এবং পিরোজপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্তত ২৫টি গরু-মহিষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

 

আজ সোমবারও ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বুধবার থেকে ফের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, আজ সোম ও কাল মঙ্গলবার কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপমাত্রা খানিকটা কমে আসবে।

 

চলতি মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত শনিবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। তাপপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে অসহনীয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে দেশের প্রায় সর্বত্রই লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র গরমের সঙ্গে লোডশেডিং জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, এ মাসে আরও কয়েকটি তাপপ্রবাহ এবং তীব্র কালবৈশাখীর শঙ্কা আছে।

 

ঝড়ে সারাদেশে ক্ষয়ক্ষতি

ঝালকাঠিতে ঝড় ও বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশুর প্রাণ গেছে। কাঁঠালিয়ার আওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের মুন্সিরাবাদ গ্রামে হেলেনা বেগম (৪৪) বৃষ্টিতে ঘরের বাইরে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে নিহত হন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের ইসালিয়া গ্রামে গরু আনতে যাওয়ার সময় প্রাণ যায় শিশু মাহিয়া আক্তারের (১২)। সদর উপজেলার শেখের ইউনিয়নে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে মিনারা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।

 

এ ছাড়া ঝড়ে ঝালকাঠির অর্ধশতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাজাপুর সদর ইউনিয়নের বলাইবাড়িতে গাছ পড়ে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে এবং ৮ থেকে ১০টি খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

 

পিরোজপুরে গতকাল সকালে কালবৈশাখীতে বহু ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে যায়। গাছ ও ঘরের নিচে চাপা পড়ে কয়েকজন আহত ও রুবি বেগম (২৮) নামে এক নারী নিহত হন। তিনি পিরোজপুর পৌর এলাকার মরিচাল গ্রামের মো. মিরাজের স্ত্রী। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তিনি চাপা পড়েন। কোলের শিশুটিও গুরুতর আহত হয়েছে। ইন্দুরকানীতে ঝড়ে ২০ একর জমির কলাক্ষেত মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

 

গতকাল সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাড়েরহাট ইউনিয়নে গাছ পড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলার লাহুড়ী, চরগাজীপুর ও হোগলাবুনিয়া গ্রাম। পিরোজপুর পৌর এলাকায় ১৪ জন ঘর ও গাছচাপা পড়ে আহত হয়েছেন।

 

ভোলার মনপুরা ও লালমোহনে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক গাছপালা। ঝড়ের কবলে পড়ে মনপুরার দাসের এলাকায় ছয় মাঝিমাল্লাসহ একটি জেলে ট্রলার ডুবে গেছে। এ ছাড়া লালমোহনের বদরপুরে ঘরচাপায় হারিস নামে এক বৃদ্ধ ও তজুমদ্দিনের শম্ভুপুরে মনজুরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে মারা গেছেন।

 

খুলনার ডুমুরিয়ার কানাইডাঙ্গা বিলে বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি বিলে গরুর ঘাস কাটার জন্য গিয়েছিলেন।

 

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে বজ্রপাতে কৃষক শহিদ মিয়া (৫২) নিহত হয়েছেন। সকালে উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা।

 

বজ্রপাতে বাগেরহাটে কচুয়ার চরসোনাকুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম লিকচান (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঝড়ে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় গাছ ও বিলবোর্ড পড়ে ১০ জন আহত হন। সদর উপজেলার পুঁটিমারী, রাধাবল্লভ, গবরদিয়া, কাড়াপাড়া, ডেমা, বাঁশবাড়িয়া, শহরতলির মারিয়া পল্লি, কচুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা ও উত্তর শৌলা গ্রাম ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে। গাছচাপায় সাফিয়া বেগম (৭৫) ও বজ্রপাতে রাতুল সিকদার (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছে ১০টি গরু-মহিষ।

 

চন্দ্রদীপ ইউনিয়নের জেলে ইব্রাহিম ফরাজী (৪৫) ও ইসমাইল রাঢ়ী নিখোঁজ রয়েছেন। দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝড়ে দুমকীতে ৩০০ থেকে ৪০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে, ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে।

 

যশোরের ঝিকরগাছায় ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলী পাটোয়ারীর ছেলে।

 

আরও খবর

Sponsered content