জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত সরকারের

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত সরকারের

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকার ওয়াশিংটনের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেছে ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুদেশের মধ্যকার নবম নিরাপত্তা সংলাপে মার্কিন প্রশাসনকে নির্বাচন ইস্যুতে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন।

 

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বহুপক্ষীয় সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় জানিয়ে সচিব বলেন, ‘সংলাপের পর তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিরা রেজনিক বলেছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি এ ধরনের নিয়মিত বৈঠকের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, যাতে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ সত্ত্বেও কোনো ধরনের গ্যাপ (দূরত্ব) তৈরি না হয়।

 

গতকাল সকাল ১০টা থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সফররত মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিকবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। সংলাপের পর মিরা রেজনিক একই ভেন্যুতে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সচিব মোমেন।

 

নবম নিরাপত্তা সংলাপ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে দুদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপের ফলোআপ হয়েছে এবার। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। প্রতিরক্ষাবিষয়ক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো বাদে সাইবার নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।

 

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু দেখতে চায়। আমরা বলেছি, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রীও এ কথা অনেকবার বলেছেন।

 

নির্বাচন কমিশন বাকি কাজগুলো করছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা লাগলে যুক্তরাষ্ট্র করবে বলে জানিয়েছেন মিরা রেজনিক। আমরা আরও জানিয়েছি, নির্বাচনের যে ধরনের প্রস্তুতি হওয়া দরকার, সেটা হচ্ছে দেখছি। রাজনৈতিক দল কে কী ভাবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

 

র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি। তারা জবাবদিহি ও দায়মুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে সরকার সবসময় সচেষ্ট। ছোটখাটো যেসব ভুল ছিল, তা শুধরে নেওয়া হয়েছে।

 

আমরা বলেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং বিশ্বকে জানানো হয়। কোনো ধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয় না। জবাবদিহির ব্যাপারটা আছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে মার্কিন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেছি। তারাও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেছেন।

 

জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) নিয়ে এ বৈঠকে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, বিষয়গুলো প্রতিরক্ষা সংলাপে আলোচনা হয়েছে।

 

তবে আমরা বলেছি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে। জাপানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। জাপানও তাদের ওডিএর আলোকে আমাদের প্রার্থী দেশ করেছে। সামনে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।

 

ইন্দো-প্যাসিফিক প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইন্দো-প্যাসিফিকে আমাদের অনেক মিল আছে। আমরা চাই, ফ্রি নেভিগেশন ও বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলোর যেন পুরো ব্যবহার হয়। তারাও বলেছে, কোনো ধরনের আধিপত্য চায় না। এ ছাড়াও মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

 

উল্লেখ্য, মিরা রেজনিক গত সোমবার দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। নিরাপত্তা সংলাপ ছাড়াও তিনি রাজনীতিক, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আজ বুধবার ভোরে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content