সারাদেশ

কুড়িয়ে পাওয়া সবজি বিক্রি করে সংসার চালান সোনালী

কুড়িয়ে পাওয়া সবজি বিক্রি করে সংসার চালান সোনালী

ভোর হওয়ার আগেই সোনালী (৫০) বাড়ি থেকে বের হন। লোহার পোলের ২২ নাম্বার বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে আসেন শ্যামবাজারে। শ্যামবাজার পৌঁছেই ছুটে যান দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কাছে। সেখানে তিনি পাইকাড়ি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল কেনার সময় সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে কিছু টাকা পান। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত এই কাজ করেন।

 

তারপর গুদামে নেওয়ার সময় বস্তা থেকে পড়ে থাকা এবং ট্রাকের নিচে পড়ে থাকা সবজি কুড়িয়ে সংগ্রহ করেন এভাবে কয়েকটি ট্রাক ঘুরে যা হয় তাই নিয়ে রাস্তার এক পাশে বিক্রি করতে বসেন। মাঝে মাঝে পাইকারি মার্কেটের লোকজন তাদেরকে উঠিয়েও দেন।

 

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রতিদিনের মতোই তিনি কাঁচামাল নিয়ে রাস্তার পাশে বসে ছিলেন। পিচঢালা রাস্তায় একটি প্লাস্টিকের বস্তার ওপর চার ভাগে রাখা গাজর, ৫০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ, ২ কেজির মতো বেগুন, ১০-১২ টার মত ক্যাপসিকাম, কিছু শিমের সঙ্গে ৫ কেজির মতো টমেটো। রাত দশটার সময় সময়ের কণ্ঠস্বর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় সোনালীসহ আরও বেশ কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে তাদের জীবনের গল্প ঠিক একই রকম।

 

সোনালী বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বাসায় চার জন ছেলে-মেয়ে। ওদের পড়াশুনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। তাছাড়া বাবার সব কিছুরই দাম বেশি। শরীরের তেমন একটা শক্তি নেই যে মানুষের বাসায় কাজ করবো। মাসে ৪ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়।

 

এছাড়াও খাওয়ার খরচ তো আছেই। এসবের জোগান দিতে বাজারে কুড়িয়ে পাওয়া কাঁচামাল বিক্রি করি। মাঝে মাঝে কম টাকা দাবির কাঁচামাল কিনেও বিক্রি করতে হয়। আবার বড় বড় পাইকারি দোকান গুলোর কাঁচামাল উঠানো নামানোর কাজে সাহায্য করলেও তারা কিছু দেয়।

 

তবে এই কাঁচামাল কারা কিনে থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মতো অনেক মানুষ আছে যারা ওসব কিনে থাকেন। আবার কখনো বড় বাবুরাও কিনেন। কেউ হয়তো ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকা দিয়ে থাকেন। আবার কোনো দিন বিক্রিও হয় না। তখন অল্প দামে কাউকে দিয়ে দেই। নয়তো আমি বাসাই নিয়ে সেগুলো রান্না করি। এভাবে দুঃখ কষ্টে চলে আমার জীবন। তবে দুঃখের কথা এখন সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই যা উপার্যন করি এতে দিন শেষে টাকা অবশিষ্ট থাকে না।

 

ঠিক তখনই মিলন নামে ক্রেতা সেই সবজির দোকানে আসেন তিনি আমাদেরকে বলেন, সব কিছুর দাম বেশি। কোন কিছু কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নাই। আজকে মাত্র ৩০০ টাকা ইনকাম করছি। এ দিয়ে কি কিনব না কিনব বুঝতে পারছি না। রাস্তার পাশে বসা খালাদের দোকানে ভাগায় সবজি বিক্রি করা হয়। ২০ টাকা করে ভাগা হলে ১০০ টাকার সবজি কিনলেই আমার পরিবার ভালোভাবে চলতে পারে। তাই এইসব দোকানে আসা।

 

আরও খবর

Sponsered content