সারাদেশ

জুয়ায় ফতুর বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে উঠলেন ইয়াবা কারবারি

জুয়ায় ফতুর বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে উঠলেন ইয়াবা কারবারি

উচ্চশিক্ষিত ও ধর্মের আলোয় আলোকিত মানুষ ডিপু চাকমা। মাথা ন্যাড়া, চোখে মোটা চশমা, পরনে গেরুয়া ত্রি-চীবর, পায়ে চটি আর হাতে ব্রহ্মের মালা– এ যেন সাক্ষাৎ ধর্মদূত! পৌরোহিত্য আর পোশাকের বদৌলতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন তিনি। শেষমেশ ১৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই সহযোগীকে নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন খাগড়াছড়ির পানছড়ি আদর্শ বৌদ্ধবিহারের প্রধান পুরোহিত ডিপু চাকমা। জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে তিনি এ পথে এসেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

গত মঙ্গলবার রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকা থেকে ইয়াবা পাচার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম। গ্রেপ্তার ডিপু চাকমা বৌদ্ধবিহারের প্রধান পুরোহিত। তাঁর দুই সহযোগী হলেন আপেল বড়ুয়া ও মোমিন হাওলাদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৬ হাজার পিস ইয়াবা, তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি ব্যাকপ্যাক উদ্ধার করা হয়েছে।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ডিপু কাঁচা টাকার লোভে কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে ঢাকায় নিয়মিত মাদকের চালান পৌঁছে দিতেন। পরে এসব মাদক ঢাকাসহ গাজীপুর, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়ে চলে যেত। এ কাজের জন্য তিনি বাহক হিসেবে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পেতেন।

 

মশিউর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা মোমিন হাওলাদারের কাছেই এসব মাদকের চালান পৌঁছে দিতেন ডিপু। তাঁর কাছ থেকে মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যেত। ধর্মগুরু ডিপু চাকমা আরেক বৌদ্ধ ভিক্ষুর শিষ্য আপেল বড়ুয়ার মাধ্যমে টাকার লোভে এ জগতে আসেন। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই ধূমপানে আসক্ত এই পুরোহিত খাগড়াছড়ি সদরে থাকার সময় অনলাইন জুয়ার সঙ্গে পরিচিত হন।

 

সেখান থেকে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তিনি নিয়মিত অনলাইনের চারটি সাইটে জুয়া খেলতেন। এতে বৌদ্ধ ভিক্ষু ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এসব টাকার মধ্যে রয়েছে নিজের বেতন, ভক্তদের দান-দক্ষিণা, নিজের ভিটামাটি বিক্রি করা টাকা এবং মায়ের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া দেড় লাখ টাকা। জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে ইয়াবা পরিবহনের কাজে জড়ান তিনি।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুরোহিত ডিপুর বাবা রূপায়ণ চাকমা খাগড়াছড়ি সদরে কাঠের কাজ করতেন। লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ছেলেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু করে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর ছেলে লোভ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবেন। এ ছাড়া আলোকিত মানুষ হিসেবে সমাজের হিংসা-বিদ্বেষের অন্ধকারে ধৈর্য ও সহনশীলতার আলো ছড়াবেন।

 

ডিপু চাকমা ২০১২ সালে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে দিঘীনালা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে তিনি রাঙামাটি রাজবিহার পালি কলেজে পাঁচ বছর মেয়াদি পালি শাস্ত্রের ওপর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি দীক্ষা নেন পুরোহিত হওয়ার। পরেন কঠিন চীবর ও গেরুয়া বসন।

 

বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে দায়িত্ব পালন শেষে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বৌদ্ধবিহারের প্রধান পুরোহিত হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরে খাগড়াছড়ি সদর ও সর্বশেষ পানছড়ির আদর্শ বৌদ্ধবিহারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। হাতিরঝিল থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে আছেন তিনি।

 

আরও খবর

Sponsered content