সারাদেশ

ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায় উঠলো ১৫ কেজির মিষ্টি

ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায় উঠলো ১৫ কেজির মিষ্টি

বগুড়ার গাবতলীতে শুরু হয়েছে দুইশ’ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলা। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ ও বাহারি রসালো মিষ্টি। দুইশতাধিক বিঘা জমিতে বসেছে এ মেলা। এতে একদিনে কয়েক কোটি টাকার মাছসহ অন্য পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে।

 

এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় সাইজের পাখি মাছ এসেছে। দেখতে অনেকটাই লম্বা সাইজের। একটির ওজন ৪০ কেজি। যার দাম চাওয়া হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। ২৫ কেজি ওজনের কাতল মাছ এনেছেন এক মাছ বিক্রেতা। প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫শ’ টাকা।

 

মেলায় আসা মানুষের চোখ আটকে যাচ্ছে ১১ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির বড় রসালো মিষ্টিতে। এ মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা করে। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা হিসেবে ঐ মিষ্টির দাম চাওয়া হচ্ছে চার হাজার ৪০০ টাকা। তবে সবচেয়ে বড় মিষ্টি ১৫ কেজি ওজনের, সেটা বিক্রি হয়ে গেছে। এছাড়া কুল এবং কেশরসহ নানা স্বাদের ফলও উঠেছে মেলায়। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ছিল চোখে পড়ার মতো।

 

এটি মাছের মেলা হিসেবেই বেশি পরিচিত। এখান থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান জামাইরা। মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে চলছে অতিথি আপ্যায়ন ও আনন্দ উৎসব। সূর্য ওঠার পর থেকেই পোড়াদহ এলাকায় মানুষের ভিড় জমতে শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিড় বাড়তে থাকে। পোড়াদহ মেলার আরেক নাম জামাই মেলা। সঙ্গত কারণে মেলার প্রধান ক্রেতা হলেন এলাকার জামাইরা।

 

স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে পোড়াদহের আশেপাশের সব গ্রামে উৎসবের ধুম লেগে যায়। প্রতি বাড়ির জামাইদের দাওয়াত করা হয়। এছাড়া অন্য আত্মীয় স্বজনদেরও দাওয়াত করে আপ্যায়ন করেন স্থানীয়রা।

 

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পূর্বে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। প্রায় দুইশ’ বছর আগের ঘটনা- মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।

 

প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয়েছে এই মেলা।

 

এ বছর মেলায় আসা রাজশাহী থেকে সবচেয়ে বড় মাছ নিয়ে আসা বাদশা ও তিতাস জানান, ২৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছ নিয়ে এসেছি। প্রতি কেজি ১৫শ’ টাকা করে দাম চেয়েছি। ক্রেতা ৮০০-১০০০ টাকা করে বলছেন।

 

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী আজাদ জানান, ১২ কেজি ওজনের কাতল এনেছি। প্রতি কেজির দাম ১৫শ’ টাকা করে চাচ্ছি। ক্রেতারা ৮০০-১০০০ টাকা করে বলছেন। এই মাছটি ১১শ’ টাকা প্রতি কেজি কেনা আছে।

 

কথা হয় মেলায় মাছ আকৃতি সবচেয়ে বড় রসালো মিষ্টি নিয়ে আসা বগুড়া পীরগাছার অনিক মিষ্টি ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সবচেয়ে বড় মিষ্টি ১৫ কেজি ওজনের, সেটা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ১১ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি আছে। প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা করে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মিষ্টি আছে- সেগুলো প্রতি কেজি ২০০-৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

 

মেলায় আসা গাবতলী উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার বাসিন্দা আলাল উদ্দিন বলেন, মেলা উপলক্ষে নাতি-নাতনিসহ মেয়ে ও জামাই এসেছে। তাদের জন্য বড় মাছ ও মিষ্টি কিনেছি।

 

পোড়াদহ মেলার আয়োজক কমিটির প্রধান ও মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা শান্তিপূর্ণভাবে মেলা চলছে। এবারের মেলায় প্রায় দুই হাজার দোকান বসেছে। এর মধ্যে মাছের দোকান চার শতাধিক। এসব দোকানে কয়েক কোটি টাকার মাছ কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

 

গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।-ডেইলি-বাংলাদেশ

 

আরও খবর

Sponsered content