সারাদেশ

ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুরের ইচ্ছাপূরণে জাবিতে ধর্ষণের ছক মামুনের

ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুরের ইচ্ছাপূরণে জাবিতে ধর্ষণের ছক মামুনের

ছাত্রলীগ নেতার ইচ্ছাপূরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে জঙ্গলে ওই নারীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেছিলেন মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন। গতকাল শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানান মামুন। জবানবন্দিতে তিনি সাভার, আশুলিয়া ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন।

 

মামুন (৪৪) ছাড়াও গতকাল দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তাঁর সহযোগী মো. মুরাদ হোসেন (২২)। মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট এবং মুরাদকে নওগাঁ থেকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ দুজনকে গতকাল দুপুরের পর আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন জানান। পরে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের খাসকামরায় তাঁরা জবানবন্দি দেন।

 

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবীর বাবুল আজকের পত্রিকাকে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর দুই আসামিকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

এই মামলায় বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিন দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার মোস্তাফিজুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালেও বাকি তিনজন জবানবন্দি দেন। তাঁরা হলেন

 

বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র সাব্বির হাসান সাগর, ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিক ও ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান। ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই নারী ধর্ষণের শিকার হন। মোস্তাফিজুর ও মামুন ধর্ষণ করেন বলে ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে আশুলিয়া থানায় ওই নারীর স্বামীর করা মামলায় অভিযোগ করা হয়। ঘটনা জানাজানি হলে বিচার দাবিতে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।সকালেই মোস্তাফিজুরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, মামুন জবানবন্দিতে বলেছেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমন্ত গ্রামে। তিনি সাভার, আশুলিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একই এলাকায় বসবাসের সূত্রে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সঙ্গে তিন-চার বছর আগে পরিচয়। তিনি মাঝে মাঝে ওই নারীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশে মাদক সরবরাহ করতেন।

 

তিনি কিছুদিন আগে তিন-চার মাস ওই নারীর ভাড়া বাসায় সাবলেট থাকায় সখ্য তৈরি হয়। এ ঘটনার আগে থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক। সেই সুবাদে তাঁর কাছে নারীসঙ্গের ইচ্ছা জানান মোস্তাফিজুর।

 

জবানবন্দিতে মামুন আরও বলেন, মোস্তাফিজুরের ইচ্ছা পূরণ করতে তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি ওই নারীর স্বামীকে ফোন করে সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে নিয়ে মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

 

পরে তিনি কৌশলে স্বামীকে দিয়ে ফোন করিয়ে ওই নারীকে তাঁর কাপড় ব্যাগে করে রাত ৯টার দিকে হলের সামনে আনেন।পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ও মামলার এক নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর ভুক্তভোগীর স্বামী, ওই ব্যাগসহ মুরাদকে হলের কক্ষে পাঠান।

 

তিনি ও মোস্তাফিজুর ওই নারীকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন। পরে তাঁরা হলের কক্ষে গিয়ে তাঁর স্বামীকে বাসায় চলে যেতে বলেন। ঘটনা জানাজানি হলে তিনি আত্মগোপন করেন।

 

এদিকে জবানবন্দিতে মুরাদ বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি পত্নীতলা উপজেলার পূর্ব নেপালীপুরে। একই উপজেলার মামুনকে তিনি মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। ঘটনার দিন তিনি ভুক্তভোগীর স্বামীকে চড়থাপ্পড় মেরে এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে সহযোগিতা করেন। ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর ও মামুনের কথামতো তাঁকে পাহারা দেন। তবে বাইরে কী ঘটেছিল, তা তিনি জানতেন না। ঘটনা জানাজানি ও মামলা হলে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পালিয়ে নওগাঁয় আত্মগোপন করেন।

 

আরও খবর

Sponsered content