বাংলাদেশ

ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত, গ্রেপ্তার ৮

ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত, গ্রেপ্তার ৮

রাজধানীর গোপীবাগে শুক্রবার রাতে ট্রেনে আগুনের ঘটনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী উল্লাহ নবীসহ দলটির কিছু নেতাকর্মী জড়িত বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। শুক্রবার রাতে অভিযানে নবীসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবী (৬৬), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ মনসুর আলম (৪২), কামরাঙ্গীচর থানা যুবদলের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল এবং কবির (৪৪), দেলোয়ার (৪৪), ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান (৩৮), কামরাঙ্গীচর থানার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন (৩৫) এবং লালবাগ থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন স্বপন (৪২)।

 

ডিবিপ্রধান বলেন, ট্রেনে আগুন লাগার আগে বিএনপির ১০-১১ জন নেতা ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু পরিকল্পনা করেছেন। কনফারেন্সে প্রথমে আসেন মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম। এরপর আসেন সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ গাফফার, ইকবাল হোসেন বাবলু, একজন দপ্তর সম্পাদক ও কাজী মনসুর।

 

হারুন অর রশীদ বলেন, তারা বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে বিশেষ করে নরসিংদীর কাছে সুবিধাজনক স্থানে অগ্নিসংযোগ করার কথা বলেন। এ ছাড়া কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ লাইনে আপ-ডাউনে সুবিধাজনক স্থানে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

 

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি টিম লালবাগের কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগায়। ভিডিও কনফারেন্সে বলা হয়- ট্রেনে কে আগুন লাগাবেন? কনফারেন্সে থাকা ১০-১২ জনের একজন বলেন তিনি আগুন লাগাতে পারবেন। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তার নামটি প্রকাশ করা হচ্ছে না।

 

হারুন অর রশীদ বলেন, এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সে থাকা আরও তিনজন আগুন লাগাতে পারবে বলে জানায়। তারা ২০১৩-১৪ সালে বিভিন্ন এলাকায় বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। তারা মিলে যাত্রাবাড়ীর আশপাশের এলাকা থেকে ট্রেনটিতে অগ্নিসংযোগ করে।

 

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, যে মোবাইল থেকে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছিল সেই মোবাইলটি উদ্ধার করেছে ডিবি। মোবাইলটি কাজী মনসুরের। তিনি আমাদের কাছে গ্রেপ্তার আছেন। যারা এক সময় জেলখানায় দাগি আসামি হিসেবে পরিচিত ছিল তারা এই অগ্নিসংযোগ করে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের রিমান্ডে এনে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই ট্রেনের চারটি কামরা পুড়ে গেছে।

 

ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটের দিকে তারা আগুন লাগার খবর পান। প্রথমে খিলগাঁও ও পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনের চারটি ইউনিট সেখানে ছুটে যায়। পরে আরও তিনটি ইউনিট পাঠানো হয়। শনিবার থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের আগের রাতে এ ঘটনা ঘটে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসছিল। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার আগে গোপীবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় ট্রেনের একটি কামরায় আগুন দেখা যায়। গাড়িটি থামার পর আশপাশের লোকজন পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। দ্রুত আগুন পাশের কামরায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে তৎপরতা শুরু করেন।

 

এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় মা ও শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যান। আহত হন আরও অন্তত একজন। তবে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত দুই মাসে প্রায় ৩০০ যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে গাজীপুরে রেললাইন কেটে রাখার ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া একাধিক স্থানে রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়।

 

আরও খবর

Sponsered content