জাতীয়

মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপন : এজেন্সিকে দ্রুত মডিফিকেশনের নির্দেশ

মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপন : এজেন্সিকে দ্রুত মডিফিকেশনের নির্দেশ

মেট্রোরেলে অপরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপন সাঁটানো নিয়ে বিপাকে পড়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা মিডিয়াকম লিমিটেড বাংলাদেশ। সাঁটানো বিজ্ঞাপনে মেট্রোরেলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে— যাত্রীদের এমন ক্ষোভ আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমটিসিএল। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে দ্রুত মডিফিকেশনের (পরিবর্তন) নির্দেশ দিয়েছে।

 

অপরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপন সাঁটানোর বিষয়টি প্রথম নজরে আসে গত ১৩ নভেম্বর। সাঁটানো বিজ্ঞাপন মেট্রোরেলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে বলে ওই দিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেট্রোরেলের যাত্রীসহ সারা দেশের মানুষ। পরে বিষয়টি আমলে নেয় ডিএমটিসিএল।

 

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জায়গা খালি আছে বলে কোচের সব অংশে বিজ্ঞাপন সাঁটিয়ে দৃষ্টিকটু করবে, এটি হওয়া উচিত নয়। এদিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নজর দিতে হবে। বর্তমান সরকারের মেগা প্রজেক্টগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা মেট্রোরেল। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু থাকলেও এখন মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় এর সুফল ভোগ করছেন নগরবাসী।

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য মেট্রোরেলে জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়। এমনই পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেল থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ আয় করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএমটিসিএল। ডিএমটিসিএল’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানিয়েছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাঁচ কোটি টাকায় বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন এজেন্সি মিডিয়াকমের সঙ্গে ডিএমটিসিএলের চুক্তি হয়। এরই অংশ হিসেবে বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি প্রথমবার চলতি মাসে (নভেম্বর) মেট্রোরেলের একটি কোচের ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপন সাঁটিয়ে জনসাধারণের সমালোচনার মুখে পড়ে।

 

অপরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপন সাঁটানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘বিশ্বের সব মেট্রোরেলেই বিজ্ঞাপন থাকে, কিন্তু সব কিছুরই একটা সৌন্দর্য থাকে। এই ছবিটা অনলাইন থেকে পাওয়া, এডিট করা মনে হচ্ছে না।

 

এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞাপন দাতা দুইজনেরই রুচিবোধ, ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিংয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মনে হচ্ছে ফার্মগেটে কোনো দেয়ালের উপর পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতো সুন্দর একটা উদ্যোগ, এভাবে নষ্ট করা উচিত না।

 

মারুফ বিল্লাহ লিখেছেন, ‘জাপানিদের কাছ থেকে মেট্রোরেল বানিয়ে নিলাম, কিন্তু ওদের কাছ থেকে কি সৌন্দর্যবোধটুকু শিখলাম না।’

মিঠুন দাস কাব্য লিখেছেন, ‘বিজ্ঞাপন দিবেন ভালো কথা, মেট্রোতে দিবেন আরও চমৎকার আইডিয়া। কিন্তু তাই বলে একই পোস্টার দিয়ে এক ইঞ্চি জায়গা খালি না রেখে, পোস্টারিং করার এ আইডিয়া কীভাবে মাথায় আসল? নাকি এটাই নতুন ট্রেন্ড? যেখানে যত জায়গা পাবা, পোস্টার দিয়ে ভরাইয়ে ফেলবা।

 

এমন সমালোচনার মুখে পড়ে ১৩ নভেম্বর ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন- ৬) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) খোন্দকার এহতেশামুল কবীরকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএমটিসিএল। পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত ১৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত পরিদর্শন করে।

 

তদন্তের বিষয়ে খোন্দকার এহতেশামুল কবীর বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে আমরা দেখেছি, আমাদের যেসব জায়গায় অ্যাড দেওয়ার কথা সেসব জায়গায় ঠিকঠাক দিয়েছে কি না। আমরা পাবলিকের রিঅ্যাকশন দেখেছি।

 

কীভাবে মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপন সুন্দরভাবে প্রদর্শন করা যায়; মেট্রোরেলের যারা যাত্রী আছেন তারা যেন বিজ্ঞাপন দেখে সন্তুষ্ট হোন এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও যেন বিজ্ঞাপন দেখে সন্তুষ্ট হয়— সেটা কীভাবে করা যায় সেজন্য আমাদের এজেন্সিকে বলা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তারা এটি করে যেন আমাদের কাছে প্রেজেন্টেশন আকারে পৌঁছায়। তারপর আমরা কম্পেয়ার করে সিদ্ধান্ত দেব। কাজটি দ্রুত করতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ, শুধুমাত্র ভাড়া থেকে মেট্রোরেল ব্যয় তুলতে পারবে না। বিজ্ঞাপনের জন্য নীতিমালা করা দরকার।

 

তিনি আরও বলেন, বিদেশেও মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপন দেখেছি। জায়গা খালি আছে বলে কোচের সব অংশে বিজ্ঞাপন সাঁটিয়ে দৃষ্টিকটু করবে, সেটি যেন না হয়। এদিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নজর দিতে হবে।

 

সূত্র: ঢাকা পোস্ট

আরও খবর

Sponsered content