সারাদেশ

শিশু সন্তানকে বিক্রির অভিযোগে বাবাসহ গ্রেপ্তার ৪

শিশু সন্তানকে বিক্রির অভিযোগে বাবাসহ গ্রেপ্তার ৪

এক লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের দেড় বছরের শিশু সন্তানকে বিক্রির অভিযোগে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পিতা সালেহ নূরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারদের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

গ্রেপ্তাররা হলেন- শান্তিগঞ্জ থানার বাবনিয়া গ্রামের মৃত. আশক আলীর ছেলে মনফর আলী (৪৫), জগন্নাথপুর থানার কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত দারিছ মিয়ার ছেলে রমাই মিয়া (৫৫) ও নরসিংদী সদর থানার স্থায়ী বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ সদর থানার ভাড়াটিয়া খেজাউরা হাছননগর এলাকার মৃত রফিক আলমের মেয়ে লাকি আক্তার (৩৮)।

 

দেড় বছরের শিশু মকবুল হোসেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনিয়া গ্রামের সালেহ নূরের ছেলে। মাস খানেক আগে মকবুল হোসেনকে টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দেন বাবা সালেহ নূর।

 

শিশু মকবুল হোসেনের মা মাফিয়া বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সুনামগঞ্জের ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ ও নরসিংদী সদর থানায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদর গ্রেপ্তার করে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিক্রি হওয়া শিশুকে উদ্ধার করে শান্তিগঞ্জে নিয়ে আসেন পুলিশ।

 

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মাফিয়া বেগম ও তার স্বামী সালেহ নূরের মাঝে দাম্পত্য কলহ চলছিল। তাদের মনোমালিন্যের রেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্ত্রী মাফিয়া বেগমকে দুই ছেলে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এক মাস আগে মায়ের কাছ থেকে তার সন্তানদের নিয়ে যেতে চায় তাদের বাবা। কিন্তু মাফিয়া বেগম সন্তানদের নিয়ে যেতে দেননি। কলহের সুষ্ঠু সমাপ্তি না হওয়ায় তিনিও তার স্বামীর বাড়িতে ফিরেননি।

 

এরপর কৌশলের আশ্রয় নেন তার স্বামী সালেহ নূর। নিজের বৃদ্ধ মা ভীষণ অসুস্থ বলে দাদিকে দেখাতে সন্তানদের নিজ বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। কিছুদিন পর সন্তান ছাড়াই আবারও মাফিয়া বেগমের বাড়িতে আসেন তার স্বামী। তখন সন্তানদের খোঁজ করেন মা মাফিয়া বেগম। সন্তানরা ভালো আছে এবং তার নিজ বাড়িতেই আছে বলে জানায় বাবা। তখন সন্তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন মা।

 

তখন সালেহ নূর বলেন, ছেলেরা তাদের দাদির সঙ্গে ঢাকা আছে। এসময় সন্দেহ হয় মাফিয়া বেগমের। শাশুড়ির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেই আসল ঘটনা ফাঁস হয়। শাশুড়ি মাফিয়া বেগম তাদের জানান, বড় নাতি রাব্বি হাসান তার কাছে আছে। এসময় ছোট নাতি মকবুল হাসানের ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি। তখন ছোট ছেলের বিষয়ে জানতে স্বামীকে চাপ দিতে থাকেন মাফিয়া। এক সময় সন্তান বিক্রির কথা স্বীকার করে সালেহ নূর।

 

সালেহ নূর জানান, মনফর আলী ও রমাই মিয়ার সহায়তায় অপর অভিযুক্ত লাকী আক্তারের নিকট এক লাখ টাকার বিনিময়ে তার ছেলেকে বিক্রি করেছেন তিনি।

 

শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মো. খালেদ চৌধুরী জানান, শিশু বিক্রির অভিযোগের ঘটনায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content