রাজনীতি

সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ

সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ

সভা-সমাবেশ ও দোয়া মাহফিল মিলিয়ে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগের দিন সোমবার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ দিনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

 

আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি বিভিন্ন মহল পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেখলেও ক্ষমতাসীনরা একে পাল্টাপাল্টি বলতে নারাজ। আওয়ামী লীগের দাবি, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ এটি।

 

দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণে গতকাল আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কর্মসূচির বিষয়ে জানান তিনি।

 

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। পাশাপাশি এদিন দেশব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

 

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ। ২৫ সেপ্টেম্বর উত্তরায় হবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশ এবং যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।

 

২৭ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে গাজীপুর মহানগর ও কাফরুলে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। ৩০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক সমাবেশ করবে কৃষক লীগ। সর্বশেষ ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সমাবেশের মাধ্যমে সাত দিনের কর্মসূচি শেষ হবে।

 

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিএনপির ১২ দিনের পাল্টা কর্মসূচি কি না জানতে চাইলে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছি না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি।

 

আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্র্রিক। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা, জনসমর্থন ও আস্থা বৃদ্ধি করাই মূল লক্ষ্য। সে জন্য কর্মসূচি দিচ্ছি। ছাড়া এ মাসেই তো আমাদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কর্মসূচি রয়েছে। সেটাও কি পাল্টাপাল্টি?

 

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে এবং কর্মসূচি দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। কারণ জনগণ তাদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। তারা যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।’ এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সজাগ থাকবে বলে জানান তিনি।

 

দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করা হবে বিএনপির এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে নাকি বাধাগ্রস্ত করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে আমরা বলতে চাই, দেশের জনগণ শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতি চায়। তারা দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নষ্ট করার অশুভ তৎপরতা অতীতেও জনগণ নস্যাৎ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।

 

হানিফ বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য। আমরা আশা করছি, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু কোনো দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তা নিতে পারে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যদি বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে সেটা জনগণ ও সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।

 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য কিছুটা বেড়েছে। এতে হয়তো কিছু মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করা হচ্ছে।

 

তৃণমূল বিএনপির সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, জনগণের দল। দেশের প্রতিটি জনগণের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে, সুযোগ আছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই যেকোনো রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচি পালন করলে আমাদের বলার কিছুই নেই।

 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আমিনুল ইসলাম আমিন, বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ, আবদুস সবুর, আবদুল আউয়াল শামীম, সায়েম খান প্রমুখ।

 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদককে অব্যাহতি

দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ওঠায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে কেন দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এমন জবাব ১৫ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

 

রিয়াজ উদ্দিন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের (নারী শিক্ষা মন্দির) পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি এ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয় শিক্ষা বোর্ড।

 

গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভা শেষে নগরের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

 

রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমি আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করে জবাব দেব।

আরও খবর

Sponsered content