সারাদেশ

স্যালাইন সংকট, রোগী পাঠানো হচ্ছে রাজশাহী

স্যালাইন সংকট, রোগী পাঠানো হচ্ছে রাজশাহী

ভাগনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। বোনও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি। ফার্মেসি থেকে চারটি স্যালাইন কিনতে হয়েছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া হচ্ছে না। সাত-আটটি ফার্মেসি ঘুরে ১৫০ টাকা করে স্যালাইন কিনেছেন। অথচ বাজারমূল্য ৯০ টাকা। কথাগুলো বলছিলেন চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজন আবদুল খালেক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী রয়েছে চারঘাটে। আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রচুর স্যালাইনের প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফার্মেসিতে সংকট দেখা দিয়েছে। সে সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্বিগুণ দামে স্যালাইন বিক্রি করছেন। এতে বিপদে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনের অভিযোগ, ফার্মেসিতে গিয়ে স্যালাইনের খোঁজ করলে প্রথমে বলা হচ্ছে– নেই। পরে জোরাজুরি করলে ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উপজেলায় একজন মাত্র ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৫৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। চলতি আগস্টের ২৬ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র তিনজন ভর্তি রয়েছেন। ১২ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোগীদের স্যালাইনের প্রয়োজন হলেই রাজশাহীতে পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আতিকুল হক জানান, ডেঙ্গু আক্রান্তদের রক্তে জলীয় অংশ কমে ঘনত্ব বেড়ে যায়। এতে রক্তচাপ কমে। রোগীদের রক্তের তারল্য ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে স্যালাইন দিতে হয়। একজন রোগীর দিনে স্যালাইনের প্রয়োজন হয় এক থেকে দুই লিটার। কোনো কোনো রোগীর বেশিও লাগতে পারে। এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ স্যালাইন।

রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা রিয়াদ বলেন, ডেঙ্গু রোগী ছাড়াও ডায়রিয়া, কলেরা ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হয়। সাধারণ ও কলেরা স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ বাড়েনি। বাজারেও সরবরাহ কম। এ সুযোগে অতি মুনফালোভী ব্যবসায়ীরা রোগী ও তাদের স্বজনকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকায় সাধারণ স্যালাইন বিক্রি করছে। এ জন্য রোগীদের অবস্থা স্যালাইন নেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

স্যালাইন এখন সোনার হরিণ মন্তব্য করে এক রোগীর স্বজন রবিউল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে নাকি সরবরাহ নেই। এ সুযোগে সরবরাহ থাকলেও ফার্মেসিগুলো না থাকার ভান করছে। ৯০ টাকার স্যালাইন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দামে কিনতে হচ্ছে। ভোগান্তি বেশি হচ্ছে রাতে। তখন স্যালাইনের প্রয়োজন হলে কোনো ফার্মেসি খোলা না থাকায় টাকা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেটের একটি ফার্মেসির মালিক রিপন আলী জানান, স্যালাইনের সরবরাহ নেই। অগ্রিম টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য কেউ কিনতে এলে ফেরত পাঠাচ্ছেন। হাসপাতালেও সরবরাহ কম। ডেঙ্গু, ডায়রিয়াসহ নানা কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। এসব রোগে ব্যবহৃত স্যালাইনের দাম ৯০ টাকা। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে স্যালাইনের সংকট তৈরি হয়েছে। যে চাহিদা পাঠানো হচ্ছে, সে অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য রোগীদের স্যলাইন দিতে পারছেন না। ফার্মেসিগুলোতেও সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে রোগীরা ভোগান্তিতে আছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জেলার সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, বাঘা ও চারঘাটে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে কাজ করা হচ্ছে। স্যালাইনের সংকটের কথা জানালে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জোগাড় করে পাঠানো হচ্ছে। আগামী মাসের চাহিদার তালিকা স্বাস্থ্য দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content