সারাদেশ

সন্তান বিক্রির টাকা ভাগাভাগিতে বিপত্তি, অতঃপর…

চট্টগ্রামে গর্ভাবস্থায় সন্তান বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। তাও আবার স্বামী-স্ত্রীর সিদ্ধান্তে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জানতে পারেন গর্ভে থাকা সন্তান জমজ। নগরীর পাঁচলাশে বেসরকারি পলি হাসপাতালে জন্ম নেয় দুটি শিশুসন্তান।

 

তাদের মধ্যে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। জন্মদানের পরপরই ছেলে সন্তানকে ৩ লাখ আর কন্যাসন্তানকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন ওই দম্পতি। পেয়ে যান বিক্রি করার লোকও।

 

হাসপাতালে ঝামেলা ছাড়াই সন্তানদের বিক্রি করলেও বিপত্তি বাধে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে। সন্তান বিক্রির টাকায় স্বামীর ভাগ বসতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্ত্রী। পরে সন্তানদের চুরির অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন স্ত্রী।

 

আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে নির্দেশ দেয়। পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে এই দম্পত্তির সন্তান বিক্রির তথ্য।

 

রোববার (৯ জুন) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা এই তথ্য জানিয়েছেন। শনিবার (৮ জুন) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর এলাকা ও নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রি করা ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করে পিবিআই।

 

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, গর্ভে সন্তান রেখেই স্বামী-স্ত্রী মিলে অনাগত সন্তানকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন জমজ সন্তান। জন্মদানের পরপরই ছেলে সন্তানকে ৩ লাখ আর কন্যা সন্তানকে ১ লাখে বিক্রি করেন স্বামী-স্ত্রী।

 

তিনি বলেন, মামলার বাদী বাবুর্চির সহকারী এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর অনাগত সন্তানকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সঙ্গে ঘটনাক্রমে সীতাকুণ্ডের রাশেদা বেগমের পরিচয় হয়।

 

রাশেদা বেগম তাদের আশ্বস্ত করে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে পছন্দমতো নবজাতক ছেলে-মেয়ে বিক্রি করে দিতে পারবে। পরে রাশেদা বেগম সন্তান নেওয়ার জন্য দুই নারীর সঙ্গে সন্তানসম্ভবা বিলকিসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

 

নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার ৩ লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে ১ লাখ টাকা রাশেদা বেগমকে দিতে রাজি হন। এছাড়াও প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ দিতেও রাজি হন তারা। রাশেদা বেগম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পান ১ লাখ টাকা।

 

মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাশের পলি হাসপাতালে বিলকিসের (ছদ্মনাম) জমজ সন্তান হয়। হাসপাতালের ডাক্তার ও বিলকিসের স্বামী মিলে তার সন্তাানদের (১ ছেলে ও ১ মেয়ের) অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেয়।

 

আর বিলকিসের বড় মেয়ে ও ছেলে এসবের প্রতিবাদ করলে তাদের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। পরে এসব বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসককে জানালে নবজাতক দুটি অসুস্থ থাকায় অন্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে জমজ সন্তানদের না পেয়ে চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. শাহেদুল্লাহ বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে স্ট্যাম্প করে জমজ সন্তানদের বিক্রি করেন। কিছুদিন পর বিক্রি থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন স্বামী। কিন্তু ৫ হাজার টাকা না দিলে বাসায় গিয়ে মারধর করে স্ত্রীর থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

 

এ ঘটনায় স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তাদের রোববার চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুকে রাখার নির্দেশ দেন। আগামীকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালে দুই শিশুর উপস্থিতি মামলাটির শুনানি হবে।

 

আরও খবর

Sponsered content