সারাদেশ

বড়শি প্রতিযোগিতার নামে চলছে ‘জুয়ার আসর’

বড়শি প্রতিযোগিতার নামে চলছে ‘জুয়ার আসর’

চট্টগ্রামে মাছ চাষের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে দিঘি লিজ নিয়ে প্রতি সপ্তাহে আয়োজন করা হচ্ছে বড়শি প্রতিযোগিতার। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন শতাধিক মৎস্য শিকারি। যেখানে প্রথম পুরস্কার ৭ লাখ টাকা ঘোষণা দিয়ে একেকটি সিট বা আসন বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ হাজার টাকায়। এমন লোভনীয় অফার পেয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখা গেছে খোদ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম জোন) মো. জসিম উদ্দিনকেও। শুক্রবার নগরীর পাহাড়তলী ভেলুয়ার দিঘিতে মাছ ধরতে দেখা গেছে সিএমপির এই কর্মকর্তাকে। এ সময় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের একটি টিমও অবস্থান করেন প্রতিযোগিতাস্থলে।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে ম্যানেজ করে বড়শি প্রতিযোগিতার নামে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন। যদিও দিঘিটি লিজ নেয়া হয়েছে প্যানেল মেয়রের ছোট ভাই আবদুল মান্নান খোকনের নামে। তবে রহস্যজনক কারণে এসব বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

১৩ দশমিক ৭৪ একর আয়তনের এই দিঘিটি চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহ্যবাহী দিঘি। এ কারণে লাইসেন্স প্রদানের সময় ১৫টি শর্ত দেওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘মৎস্য চাষের জন্য লাইসেন্সকৃত ডোবা/পুকুর/জলাশয় অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অন্য কারও কাছে হস্তান্তর বা মাটি কেটে সংস্কার করা যাবে না। অথচ এসব শর্তের কোনোটির তোয়াক্কা করেননি ইজারাদার। দিঘির পাড়ে অফিস নির্মাণ, পাড়ের গাছপালা কাটাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করেছেন। বাইরে থেকে মাছ সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে দিঘিতে যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে তার জন্যও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়নি। লাখ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দিয়ে বড়শি প্রতিযোগিতার নামে প্রকারান্তরে ‘জুয়ার আসর’ বসানো হয়েছে বলে রয়েছে অভিযোগ। অনেকেই লাখ টাকা পুরস্কারের লোভে পড়ে অংশ নিলেও ফিরছেন খালি হাতে।

শুক্রবার সকালে ভেলুয়ার দিঘিতে গিয়ে দেখা যায়, দীঘির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে ১১২টি আসন বসিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বড়শি প্রতিযোগিতা। প্রতিটি আসনের জন্য ফি নেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা করে। এই হিসাবে আদায় হয়েছে ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাছ শিকার করা ব্যক্তিকে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয় ৭ লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ লাখ, তৃতীয় ৩ লাখ, চতুর্থ ২ লাখ, পঞ্চম ১ লাখ, এভাবে সর্বশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় ৪০ হাজার টাকা।

২০১৯ সালে লিজ নেওয়ার পর মাঝেমধ্যে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও গত কয়েক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দিঘির পাড়ে আসেন সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. জসিম উদ্দিন। পরে দিঘির পশ্চিম পাড়ের ১০৮ নম্বর সিটে মাছ ধরতে বসেন তিনি। একই সারিতে আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখা গেছে। এ সময় ডবলমুরিং থানার এএসআই সেলিম সরকারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে। সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাছ ধরেন প্রতিযোগীরা। এদিন ৫ শতাধিক মানুষের সমাগম হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিযোগিতার নামে জুয়ার আসর বসানো হয়েছে কি না সেটি দেখতে গিয়েছিলাম। আমি বড়শি প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি।

হেলাল উদ্দিন নামে এক প্রতিযোগী বলেন, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা আসলে নেশার মতো। আর এটি যদি প্রতিযোগিতা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সেখানে টাকা কোনো বিষয় নয়।

ডবলমুরিং থানার ওসি মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভেলুয়ার দিঘির বড়শি প্রতিযোগিতায় অনেক মানুষের সমাগম হয়। এ ধরনের সমাগমের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার অনুমতি প্রয়োজন।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, রেলওয়ের দিঘিটি লিজ দেওয়া হয়েছে মাছ চাষের জন্য। কিন্তু সেখানে বাইরে থেকে বড় মাছ ফেলে চাষের পরিবর্তে নিয়মিত বড়শি প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে বলে আমরাও জেনেছি। বড়শি প্রতিযোগিতার জন্য আমরা অনুমোদন দিইনি।

মাছ চাষের নামে বড়শি প্রতিযোগিতার আয়োজনকে রীতিমতো ‘জুয়ার আসরে’ পরিণত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশেই এ ধরনের বড়শি প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমার লাভের পরিবর্তে লোকসানই হয় বেশি। মূলত বিনোদনের জন্যই এই আয়োজন। এ জন্য রেলওয়ে বা সিটি এসবির অনুমতি প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

আরও খবর

Sponsered content