সারাদেশ

যে মাদ্রাসায় নিরাপদ আশ্রয় পায় প্রতিবন্ধীরা

ছোটবেলায় চোখের সমস্যার কারণে কিছু দিন চোখে দেখতে পারেননি। সেই দিনগুলো কেমন দুর্বিষহ ছিল তা এখনো মনে পড়ে। দৃষ্টিহীন একজন মানুষ কত অসহায় ও নিরুপায় হয়ে থাকে তা তিনি ভালোভাবেই বোঝেন। দৃষ্টিহীন বা প্রতিবন্ধীরা দেশ ও সমাজের সুবিধাগুলো অন্যদের মতো ভোগ করতে পারে না। সবাই এসব অসুস্থ লোককে ভিন্ন চোখে দেখেন। জরিপে দেখা গেছে, পঁচানব্বই ভাগেরও বেশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত থাকেন।

 

সব কিছু বিবেচনা করেই মুফতি আলী ইবনে ইসলাম সিদ্ধান্ত নেন প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি মাদ্রাসা করার। সেই ভাবনা এবং কিছু প্রতিবন্ধীর আবদারে ফেনী জেলার পাঁচগাছিয়ার তেমুহনী বাজারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আল হিদায়া প্রতিবন্ধী মাদ্রাসা।

 

মুফতি আলী ইবনে ইসলামের দাবি, বাংলাদেশে এটিই প্রথম মাদ্রাসা যেখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, বাকপ্রতিবন্ধী, শ্রবণপ্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী— এই চার প্রকারের প্রতিবন্ধীর জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি থাকা-খাওয়াসহ পড়ালেখা করার সুযোগ রয়েছে।

 

এ ছাড়া এতিম-মিসকিন ও প্রতিবন্ধীদের থাকা-খাওয়া এবং পড়ালেখার জন্য তিনি স্থাপন করেছেন আল হিদায়া মসজিদ-মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানা। এটি সম্পূর্ণ লিল্লাহ প্রতিষ্ঠান। ভবনটির নিচ তলার কাজ চলমান রয়েছে।

 

মুফতি আলী ইবনে ইসলামের মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম (১৯) বলেন, অনেক ইচ্ছে ছিল কুরআনের হাফেজ হওয়ার। কিন্তু চোখে দেখতে না পারায় হতাশ ছিলাম। আল্লাহ তায়ালা আমার দোয়া কবুল করেছেন। এ কারণেই হয়তো আমি এ মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখন আমার মত আরো অনেক প্রতিবন্ধী কুরআন পড়তে পারবে।

 

ফেনীর পাঁচগাছিয়ার মাথিয়ারা গ্রামে মুফতি আলীর জন্ম। বাবা শামসুল ইসলাম ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে অবসর সময় কাটাচ্ছেন।

 

মুফতি আলী ইবনে ইসলাম কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরা (মাস্টার্স) ও ইফতা পরীক্ষায় মুমতাজ (গোল্ডেন এ+) অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে কামিল সমাপ্ত করেছেন।

ওয়াজ-মাহফিল ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যদিও তিনি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়, কিন্তু শিক্ষার সংস্কার, মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিম-মিসকিন, গরিব-অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণে লেগে থাকাই যেন তার বেশি পছন্দের।

 

মুফতি আলী আন্তর্জাতিক মানের আরবি ও ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ফেনীতে স্থাপন করেছেন মাদ্রাসাতুল হিদায়া। মাদ্রাসাতুল হিদায়া খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করার লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন দারুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মহিলা মাদ্রাসা। যেটি তার সহধর্মিণী পরিচালনা করছেন এবং প্রতিষ্ঠানটি শুধু নারী শিক্ষিকা দ্বারা পরিচালিত।

 

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে গরিব-দুঃখীদের সহযোগিতা, বন্যায় কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, ইফতারি বিতরণ, কুরবানির গোশত বিতরণসহ নানামুখী সহযোগিতামূলক সামাজিক কাজে রয়েছে তার বহুমুখী অবদান। এসব কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে তিনি আল হিদায়া ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় রয়েছেন।

 

আরও খবর

Sponsered content