সারাদেশ

সন্তান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও চিন্তায় গামছা বিক্রেতা বাবা

সন্তান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও চিন্তায় গামছা বিক্রেতা বাবা

বড় বোনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া ট্যাব দিয়ে ইউটিউব ও অনলাইনে পড়াশোনা করে মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন গ্রামেগঞ্জে ফেরি করে গামছা বিক্রেতার ছেলে রমজান খান সাব্বির। বরিশাল উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের পাশের দামোদরকাঠি গ্রামের কৃষক ফিরোজ খানের ছেলে সাব্বির খান।

 

উজিরপুরের এইচএম ইন্সটিটিউট থেকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হোন সাব্বির। পরে ভর্তি হোন সরকারি গৌরনদী কলেজে। এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। ছোট থেকে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করেই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছেন সাব্বির। তবে অর্থ সংকটে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

সাব্বির জানান, বোনের উপহার পাওয়া ডিজিটাল জনশুমারি ট্যাব দিয়ে অনলাইনে পড়াশোনা করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কোথাও প্রাইভেট পড়ার মতো সুযোগ ছিল না। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কোনো বইও কিনতে পারেননি।

 

শুধু অনলাইন ও ইউটিউব থেকে টিউশন নিয়ে অংশ নিয়েছেন ভর্তি পরীক্ষায়। নবম শ্রেণিতে যখন বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেন সাব্বির, তখন থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তবে যত কষ্ট হোক স্বপ্নপূরণে সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তার বাবা। সেই লক্ষ্য ঠিক রেখেই এখন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন সাব্বির।

 

সাব্বির বলেন, ‘৬৭ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে আমি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি। আমার পরিবারের অসচ্ছলতায় কোনো কোচিংয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না। আমার ছোটবোন তার স্কুল থেকে একটি ট্যাব উপহার পেয়েছিল। সেটি দিয়ে অনলাইনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ধারণা নিয়েছি।

 

মূলত ইউটিউব থেকে টিউশন নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। পরীক্ষায় আমি ৪ হাজার ৭৪১তম হয়েছি। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন, যাতায়াত সবমিলিয়ে আব্বা একটি এনজিও থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ করে এনেছিলেন। সেই টাকা এখনো শোধ করা হয়নি।

 

সাব্বিরের বাব ফিরোজ জানান, পৈতৃক ১২ শতাংশ জমির ওপরে তার একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। দুই সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করেন তারা। সাধারণত অন্যের জমিতে কাজ করেই পরিবারের আয় হয়। পাশাপাশি হাটে, গ্রামে লুঙ্গি-গামছা বিক্রি করে সংসার চলে। ছেলের ইচ্ছায় ধার করে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় পাঠায়। কিন্তু টাকার অভাবে কোনোদিনও কোচিংয়ে পড়ানোর সুযোগ হয়নি। পরে পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে প্রথম চেষ্টাতেই চান্স পেয়েছেন সাব্বির।

 

ফিরোজ বলেন, ‘আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পাওয়া দ্বিগুণ চিন্তা বেড়ে গেছে। বর্তমানে সাব্বিরকে ভর্তি করানোরও টাকা নেই হাতে। ভর্তিতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা দরকার। এছাড়াও ওর পড়াশুনা চালিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্য আমার কাছে নেই। এখনেই ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আটকে আছে।

 

এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া সাব্বির খানের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তার ভর্তির বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতা আছে। ভর্তির ব্যাপারে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়কে সার্বিক সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হয়েছে।

 

আরও খবর

Sponsered content