ধর্ম

যেসব শর্তে একাধিক স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো জায়েজ

যেসব শর্তে একাধিক স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো জায়েজ

ইসলামে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করা একটি ভর্ৎসনামূলক অপরাধ। বিয়ে চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক বিয়ে করেছিলেন কিন্তু উম্মতের জন্য একাধিক বিয়ে তখনই জায়েজ, যদি ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান নিশ্চিত করা যায়। অন্যথায় একজন স্ত্রী থাকাবস্থায় দ্বিতীয়জনকে বিয়ে করা ইসলামে অবৈধ।

 

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে ভালো লাগে- দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)…’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৩)

 

এখন প্রশ্ন হলো- সব শর্ত মেনে কোনো সক্ষম পুরুষ যদি একাধিক বিয়ে করেন এবং সবাইকে নিয়ে একরুমে ঘুমাতে চান তবে তা কি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে?

 

এর উত্তর হলো- তিন শর্ত মানতে পারলে একরুমে একাধিক স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো যাবে। সেগুলো হলো-

 

(১) সব স্ত্রীর সম্মতি থাকতে হবে। ইবনু কুদামা (রহ) বলেন, ‘পুরুষের জন্য দুই স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকা তাদের সম্মতি ব্যতীত জায়েজ নেই। কেননা, উভয়ের মাঝে বৈরিতা ও ঈর্ষা থাকে বিধায় উভয়ের ক্ষতি হতে পারে’। (আলমুগনি: ৭/৩০০)

 

(২) এক স্ত্রীর সামনে অন্য স্ত্রীর সতর খোলা থাকতে পারবে না। কেননা, নারীর জন্য অপর নারীর সতর দেখা হারাম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষ পুরুষের এবং নারী নারীর সতর দেখবে না’। (মুসলিম ৩৩৮) আর নারীর সামনে নারীর সতর হচ্ছে, নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত’। (হেদায়া: ২/৪৪৫; হিন্দিয়া: ৫/৩২৭, বাহরুর রায়েক: ৯/৩৫৪)

 

(৩) এক স্ত্রীর সামনে আরেক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা যাবে না। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষ তাবেঈগণ ‘ওয়াজাস’-কে ঘৃণা করতেন। ওয়াজাস হলো- এক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার সময় অপর স্ত্রী আওয়াজ শুনতে পাওয়া। আর ঘৃণা করা দ্বারা পূর্ববর্তীগণ উদ্দেশ নিতেন- হারাম মনে করা’। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৪/৩৮৮)

 

ইবনু কুদামা (রহ) বলেন, ‘যদি স্বামী উভয় স্ত্রীর সম্মতিতে একজনের সামনে আরেকজনের সঙ্গে সহবাস করে তাহলে এটা নাজায়েজ। কেননা, এতে রয়েছে নিকৃষ্টতা, নির্বুদ্ধিতা ও নোংরামি। সুতরাং এটি তাদের সম্মতির কারণে জায়েজ হয়ে যাবে না’। (আলমুগনি: ৮/১৩৭)

 

উপরোক্ত তিনটি শর্তের একটি অপূরণ থাকলেও একরুমে একাধিক স্ত্রী নিয়ে ঘনিষ্ট সময় কাটানো নাজায়েজ। উল্লেখ্য, মানুষ নৈতিকতা ও লজ্জার মতো অমূল্য সম্পদের কারণেই সম্মানিত।

 

তাছাড়া ইসলামে লজ্জাশীলতার গুরুত্ব অনেক বেশি। কোনো মুসলমান নির্লজ্জ হতে পারে না। নবীজি (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাশীলতা। (ইবনে মাজা, বাবুল হায়া: ২/ ১৩৯৯)

 

ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, লজ্জা এবং ঈমান একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন এর একটি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যায়। (ইবনে আবি শায়বা: ৫/২১৩)

 

হাদিসে আরো এসেছে, ‘ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে এর মধ্য থেকে লজ্জা ঈমানের একটি (গুরুত্বপূর্ণ) শাখা। (বুখারি, সহিহাইন, কিতাবুল ঈমান: ১/১২)

 

অতএব, লজ্জা ও ভদ্রতা এবং ইসলামি শিষ্টাচারের দাবি হলো- দুই স্ত্রীকে নিয়ে একরুমে না ঘুমানো কিংবা ঘনিষ্ট সময় না কাটানো। তবে কেউ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে চাইলে তাকে উপরে বর্ণিত তিনটি শর্ত মানতে হবে।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শালীন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ইসলামি শিষ্টাচারগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।