সারাদেশ

রাজাকারের মেয়ে ও পুত্রবধূ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপি

রাজাকারের মেয়ে ও পুত্রবধূ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হতে যাচ্ছেন ৪৮ জন নারীনেত্রী, যারা দলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের পরিবারের সদস্যরাও দলের জন্য অবদান রেখেছেন। তবে অনেকের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করার কালো ইতিহাস রয়েছে। কারও কারও পরিবারের সদস্য বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। তেমনই দুজন হচ্ছেন পঞ্চগড় ও সাতক্ষীরা থেকে নারী সংরক্ষিত আসনে দল মনোনীত প্রার্থী রেজিয়া ইসলাম ও লায়লা পারভীন সেঁজুতি।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেজিয়ার বাবা রাজাকার হিসেবে কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে। তবে তার স্বামী, ছেলে ও পরিবারের অনেকে আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ এবং দলের তৃণমূলের নীতিনির্ধারক ও সংগঠক। অন্যদিকে, সেঁজুতির শ্বশুর চিহ্নিত রাজাকার হলেও বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সাতক্ষীরা জেলার অন্যতম সংগঠক ও জাসদের গণবাহিনীর সদস্য। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত।

 

পঞ্চগড়ের রেজিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০০৭ সাল থেকে। এর আগে ১৯৯৭ সাল থেকে একই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তার স্বামী ছিলেন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। তার ছেলে আনোয়ার সাদাত সম্রাট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। সম্রাট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান।

 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, তার বাবার দিকে সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবা খামির উদ্দিন প্রধান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকা রাখেন। পরে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তার ছোট বোন রিনা পারভিন বিএনপির ২০০১-০৬ সরকারের সময় সংরক্ষিত আসনে নারী এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

এখন তিনি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে জড়িত। বাবা উনার পছন্দের দল করেছেন। যেটা ভালো লেগেছে সেটা করেছেন, আমি আমার রাজনীতি করেছি। বিয়ের পর থেকে আমি স্বামীর বাড়িতে আছি। আমার স্বামীর সঙ্গে কাজ করেছি। স্বাধীনতার পর পঞ্চগড়ে দলের হাল ধরেছি।

 

অন্যদিকে, সাতক্ষীরার লায়লা পারভীন সেঁজুতি ২০১৭ সালে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রবেশ করেন। কিন্তু ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পাঠায় কেন্দ্রের কাছে। পরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

তার বাবা স ম আলাউদ্দিন ছিলেন সাতক্ষীরার বীর মুক্তিযোদ্ধা। যদিও তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের হয়ে গণবাহিনীর সদস্য ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। তবে তার শ্বশুর নেয়ামত উদ্দিন মুক্তার ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। এজন্য ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারি দালাল আইনে তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন বইয়ে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লিখিত রয়েছে।

 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, তার শ্বশুরবাড়ির দিকের পরিবারের বেশিরভাগই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র কালবেলাকে বলেন, যতটুকু শুনেছি তার শ্বশুর মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটিতে ছিলেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেঁজুতির শ্বশুর ছাড়াও তার ভাশুর আজম ছিলেন বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের আহ্বায়ক। ননদ ফেরদৌসি আরা লুসি মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও অন্য ননদের স্বামী সৈয়দ ইফতেখার আলী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সেঁজুতি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না, যারা এসব তথ্য ছড়াচ্ছে, তারাই প্রমাণ করুক।

 

আরও খবর

Sponsered content