সারাদেশ

চিলমারীতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

চিলমারীতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

চিলমারীতে দোকান ও কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। চিলমারী উপজেলায় হতদরিদ্র নারীরা পুরুষের পাশাপাশি দোকানের ব্যবসা ও দরজি কাজ করছেন। এক সময় নারীরা সংসারের বোঝা হলেও এখন তারা রাস্তার পাশ্বে দোকানের ব্যবসা ও বাড়িতে দরজীর কাজ করে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। এসব হতদরিদ্র নারীরা স্বপ্ন দেখে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে নিজের সংসার, সন্তান ও নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজের ইচ্ছেমত কেনাকাটা, আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন নারীরা।

 

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অবস্থিত বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ ২০১৯ সালের ১লা জুলাই হতে কিন্ডারনট হিলফী (কেএনএইচ) – জার্মানির আর্থিক সহযোগিতায় প্রত্যাশা প্রকল্পের উদ্যোগে থানাহাট, রানীগঞ্জ ও রমনা মডেল ইউনিয়নের হতদরিদ্র পরিবারের নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ তাদের স্বনির্ভরতার জন্য কাজ করে আসছে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় ৩টি ইউনিয়নের ১২০টি মা আত্মসহায়ক দল গঠনের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৪শত নারীদের স্বনির্ভরতার জন্য কাজ করছে এবং তাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলছেন ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ। পাশাপাশি সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলেন নারীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেছেন সেই সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে দোকান, দরজী কাজসহ বিভিন্ন ধরনের আয় বৃদ্ধিমূলক কাজ করছে নারীরা।

 

থানাহাট ইউনিয়নের ফকিরের কুটি গ্রামের ফেরদৌসী বেগম (৩৮) বলেন, আমার পরিবার ছিলো হতদরিদ্র পরিবার ছিলো। আমার স্বামী একজন দিনমজুর ছিলো কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলতো। ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ সংস্থার সহযোগিতায় আমাদের গ্রামে আস্থা নারী আত্মসহায়ক দলের সদস্য হই। এবং সেই সাথে প্রতিমাসে টাকা জমা করি সেখান থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে দোকান চালু করি প্রতি মাসে ১৫ -২০ হাজার টাকা আয় করছি এখন সংসার ভালোই চলছে। সেই সাথে ছোট করে গরুর খামার তৈরি করেছি।

 

থানাহাট ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের নারী আকলিমা বেগম বলেন, আমার ৪ মেয়ে ১ ছেলে স্বামী দিনমজুর কাজ করে আমাদের কোনো নিজের কোনো যায়গা-জমি নেই। স্বামীর আয় দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে পারছিলাম না। কয়েক বছর আগে দলের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে মুদির দোকান শুরু করি। মুদির দোকান করে প্রতি মাসে সে ৮- থেকে ১০ টাকা আয় করছি। সেই আয় দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখা পড়ার খরচ বহন করছি। এবার বড় মেয়ে ৪.৮৩ পেয়ে এইচএস সি পাশ করেছে।

 

থানাহাট ইউনিয়নের কিশামতবানু জুম্মাপাড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা দুলালী বেগম বলেন, ১০ বছর আগে আমাকে স্বামী তালাক দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ২ মেয়েসহ বাবার বাড়ি চলে আসি। দুই মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করছিলাম। সে সময় ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ সংস্থার সহযোগিতায় আধার আলো নারী আত্মসহায়ক দলের সদস্য হই এবং সেখানে কিছু সঞ্চয় জমা করি।

 

দলের সহযোগিতা নিয়ে সে কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি দর্জি কাজ করছি। এখন আমি প্রতি মাসে ৮-১০ টাকা আয় করছি। সেই আয় দিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি এবং ছোট মেয়েকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াশোনা করাচ্ছি। সংসার ও ভালোই চলছে।

 

ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশের প্রত্যাশা প্রকল্পের প্রোজেক্ট অফিসার মো. আব্দুল মালেক সরকার বলেন, ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ একটি বেসরকারি উন্নয়ন মূলক আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করে আসছে।

 

এরই ধারাবাহিকতা কিন্ডারনট হিলফী (কেএনএইচ)- জার্মানির আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৯ সালের চিলমারী উপজেলার থানাহাট, রানীগঞ্জও রমনা ইউনিয়নে হতদরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বনির্ভর এবং শিশু অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যাশা ( প্রোটেকটিং ওম্যান এন্ড চিল্ড্রেন ফ্রম এবিউজ থ্রু সেল্ফ হেল্প এপ্রোচ) প্রকল্পটি কাজ করে আসছে।

 

বর্তমানে ১শত ২০টি নারী আত্মসহায়ক দলে প্রায় আড়াই হাজার সদস্য নিয়ে কাজ করছে একই সাথে প্রায় ৭শত শিশু, কিশোর কিশোরী সদস্য রয়েছে। মায়েদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে তাদের কে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনমূলক সেশন প্রদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সঞ্চায়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

 

ফলে নারীদের প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা সঞ্চয় হয়েছে এবং সেই সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের আয় বৃদ্ধি মূলক কাজ করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১শত ১৫ জন নারী মুদির ব্যবসা করছেন এতে করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।