জাতীয়

দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি জামায়াতের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাস-অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল গণভবনে আসন্ন শীত-মৌসুমে শীতার্ত মানুষকে সহায়তায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভা-ারে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেয়া অনুদান গ্রহণকালে তিনি এ কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় ইদানীং আবার সেই অগ্নিসন্ত্রাস আর অবরোধের নামে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমি জানি না এতে কার কতটুকু লাভ হচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। একজন মানুষ হয়তো কষ্ট করে সারা জীবনে একটা বাস কেনেন, আর অবরোধে সেটা পোড়ানো হচ্ছে। বাসের ভেতর হেলপার ঘুমিয়ে আছে, সেই ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটাচ্ছে আমি জানি না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেই ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ সিট পেয়েছিল। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। আর বাকি অন্যরা।

 

আমরা সরকারে এসেছি, এরপর ২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচন তখনও অগ্নিসন্ত্রাস এবং নানা ঘটনা ঘটে। সেগুলো অতিক্রম করে আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে সরকারে। এ সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনীতিটা যেন সঠিকভাবে চলে- সেভাবে আপনারা একটু সহযোগিতা করবেন।

 

তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এখন যেমন একটা অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়ছে, সেখানে আপনাদেরও একটু নজর দিতে হবে। আপনারা সহযোগিতা করবেন যেন আমাদের অর্থনীতি কোনো মতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের দেশে টাকা পয়সা থাকলে সেটা দেশের জন্যও লাভ, আর নিজেদেরও একটা নিশ্চয়তা থাকে। সেই জিনিসটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। নিজের দেশটার দিকে আগে তাকাতে হবে।

 

অনুরোধ করবো সেই বিষয়টার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ২৫ দশমিক ১ ভাগ ছিল সেটা আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আগামীতে সেইটুকুও থাকবে না। একেবারে হতদরিদ্রদের বিনা পয়সায় খাবার, ওষুধ, চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। পাশাপাশি ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। দেশের শীতার্ত মানুষের জন্য অনুদান দেয়ায় ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন সরকার প্রধান।

 

এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ঘিরে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’- উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্যটি নিছক একটি ভাস্কর্য নয়। এটি দেশকে জানার একটি ইতিহাস। গতকাল নগরীর বিজয় সরণিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘মৃত্যুঞ্জয়’- নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যা ২০২১ ও ২০২২ সালের বিজয় দিবসের প্যারেডে প্রদর্শিত হয়েছিল। এই চত্বরের কেন্দ্রস্থলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে দেয়ালে ম্যুরালও স্থান পেয়েছে।

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত এই চত্বরের সাতটি দেয়ালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতার নেতৃত্ব ও অবদান চিত্রিত করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’- পরিদর্শন করেন এবং পরে সেখানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সংগ্রাম ছিল বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য।

 

বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষা বাংলার অধিকার হরণ করার চেষ্টা হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ এবং আন্দোলন শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রাম শুরু হয়। তিনি বলেন, আমরা সেই সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

 

জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে এই স্বাধীনতা ও যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছে, যুদ্ধ করেছে এবং বিজয়ী হয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, এবং একটি উন্নয়নশীল জাতির মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশকে সমুন্নত রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক।

 

আমাদের শিশুরাই স্মার্ট বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে, বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। এভাবেই তোমরা নিজেদের গড়ে তুলবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটি কথা (আপনাদের) মনে রাখতে হবে যে শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অর্থ, সম্পদ কিছুই সম্পদ নয়। (আসল) সম্পদই একমাত্র শিক্ষা। শিক্ষা ভালোভাবে গ্রহণ করলে, কেউ তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না ছিনতাইও করতে পারবে না, এটা তোমার কাছেই থাকবে।

 

আর শিক্ষা থাকলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা যায়। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সামরিক- বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

আরও খবর

Sponsered content