বিনোদন

জুয়ার টাকা নিয়ে রুফির সঙ্গে দ্বন্দ্বেই আত্মহত্যা করেন হিমু : ধারণা পুলিশের

জুয়ার টাকা নিয়ে রুফির সঙ্গে দ্বন্দ্বেই আত্মহত্যা করেন হিমু : ধারণা পুলিশের

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হোমায়রা হিমু বিগো লাইভে আসক্ত ছিলেন। বিগোতে কয়েন কিনে হিমুকে জুয়া খেলতে সাহায্য করতেন মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়া। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, জুয়ার টাকা নিয়ে রুফির সঙ্গে ঝগড়া থেকে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন হিমু।

 

হিমু উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১ হাজার ২০০ স্কয়ার ফিটের একটি বাসায় থাকতেন। ২০০৯ সালে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে বাসাটি কিনেছিলেন তিনি। সজ্জিত ফ্ল্যাটটি এখন ফাঁকা পড়ে আছে। বৃহস্পতিবার হিমুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর এ ফ্ল্যাটের ছিলেন তাঁর সাহায্যকারী ও রুপসজ্জাকারী মিহির। গতকাল শনিবার তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে হিমুর স্বজনরা। তবে স্বজনেরা দাবি করছেন মিহির নয় হিমুর মৃত্যুর নেপথ্য ছিলেন মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়া। উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের হওয়া আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় রুফি ইতিমধ্যে কারাগারে আছেন।

 

মামলা তদন্তকারী সূত্র বলছে, অভিনেত্রী হিমু বিগো লাইভে আসক্ত ছিলেন। বিগো লাইভ বিভিন্ন কয়েন (গোল্ড ও ব্রোঞ্জ) কিনে খেলতে হয়। হিমুকে একাজে সাহায্য করতেন রুফি। চার-পাঁচ মাসে নিজের টাকা দিয়ে কয়েন কিনে হিমুকে জুয়া খেলতে সাহায্য করতেন। হিমুর আসক্ততা বাড়ায় পিছু টান দিয়েছিলেন রুফি। ফেরত চেয়েছিলেন নিজের টাকাও। সেই লেনদেন নিয়েই হিমুর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধে রুফির। সেখান থেকেই অভিমান করে আত্মহত্যা করে থাকতেন পারেন বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

 

বাসাটি তত্ত্বাবধায়ক ওয়াহেদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি গত তিন মাস ধরে এই বাসায় কাজ করেন। সে দায়িত্বে থাকা সময় জিয়াউদ্দিন রুফিকে প্রায় সময় এই বাসাতেই থাকতে দেখেছেন। চার-পাঁচ দিন থাকার পর মাঝে মাঝে দুই একদিনের জন্য চলে যেতেন আবার আসতেন। বাসার তত্ত্বাবধায়ক ওয়াহেদের দাবি, তিনি রুফিকে হিমুর স্বামী হিসেবেই জানতেন।

রুফিকে আটকের পর র‍্যাবও গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে রুফির বিয়ে হয়। কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু হিমু ও রুফির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। রুফি আবার বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং চার মাস আগে তাঁরা ঘনিষ্ঠ হন। একপর্যায়ে রুফি বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত হিমুর বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ওয়াহেদ বলেন, সেদিন রুফিই তাকে ফোন দেয়। হিমু অসুস্থ হয়ে গেছে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে বলে দ্রুত ছয়তলায় আসতে বলেন। তিনি যাওয়া পর বিছানার চাদরে শুইয়ে মিহির রুফিসহ তিনজন মিলে হিমুর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। গাড়িটি তখন রুফিই চালাচ্ছিলেন।

উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ কশিনার মির্জা সালাউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানাগেছে রুফি ও হিমুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও একজন অপরজনকে সন্দেহও করত। তবে সেদিন তাদের মূল বিরোধ হয়েছিল টাকা নিয়ে। পুলিশ সূত্র বলছে, হিমু যে লাইলনের রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়েছে, সেটি ছিল কাপড় শুকাতে দেওয়ার রশি। আর তাঁর রুমেই স্টিলের একটি মই ছিল। মইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদের পুলিশকে জানিয়েছিল রুফি। তবে পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মিহিরকে সন্দেহ করছে না। তবে তাকেও নজরদারিতে রেখেছে।

 

অভিনেত্রী হিমুর খালাতো ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আত্মহত্যার হিসেবে দেখলেও বিভিন্ন কারণে এটি স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলে মনে হচ্ছে। কারণ হিমুর গলায় আঘাতের চিহ্নের পাশাপাশি শরীরে আঘাতে চিহ্নও দেখা গেছে। শরীরের আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্টে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যদি চিকিৎসক পেয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো পুরোনো হতে পারে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।

 

হিমুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিমু তাঁর মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাঁর বাবা প্রকৌশলী সানাউল্লাহ মাস দু-এক আগে মারা যান। এর আগে ২০২০ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়ে হিমুর মা শামীম আরা চৌধুরী মারা যান। তবে হিমুর মায়ের সঙ্গে তাঁর বাবার সম্পর্ক ছিল না। হিমু যখন ছোট ছিল, তখন তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

 

হিমুর মামা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক মঈন উদ্দিন চৌধুরী কামরুল বলেন, ‘১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় হিমুর জন্ম। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে নাট্য জগতে প্রবেশ করে। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে।

টিভি নাটকের নিয়মিত অভিনয় শিল্পী হোমায়রা হিমুকে সিনেমাতেও দেখা গেছে। মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু। এরপর কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। তাঁর অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমা ‘তোরে কত ভালোবাসি’, যেটি পরিচালনা করেছেন দেওয়ান নাজমুল।

 

আরও খবর

Sponsered content