জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আধুনিক ফ্ল্যাটে কেমন আছেন বস্তির বাসিন্দারা?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আধুনিক ফ্ল্যাটে কেমন আছেন বস্তির বাসিন্দারা?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর বস্তির বাসিন্দাদের জন্য ভাড়াভিত্তিক আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের কালশী সংলগ্ন বাউনিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ছয় বিঘা জমির ওপর বস্তিবাসীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৪ তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ইতোমধ্যে তিনটি ভবনের ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট বস্তিবাসীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য দুটি ভবনে আরও ২৩৩টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ শেষে হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে।

 

সোমবার (২ অক্টোবর) সরজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায় বুঝে পাওয়া এসব ফ্ল্যাটে ইতোমধ্যে মিরপুরের কলাবাগান বস্তির কার্ডধারী বাসিন্দারা বসবাস শুরু করেছেন। অবাসযোগ্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে নির্মল পরিবেশে এসে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন তাদের সবাই। কারও কারও ঘরে শোভা পাচ্ছে নতুন আসবাবপত্র। অধিকাংশ ফ্ল্যাটের বারান্দায় বেড়ে উঠছে নানা রকমের ফুল গাছ।

 

বাসিন্দারা জানান, ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকার অধরা স্বপ্ন এখন বাস্তব। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এসব ফ্ল্যাটে এসে নিজেদের এখন আর বঞ্চিত মনে হচ্ছে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি আর স্বল্প আয়ের কারণে এসব ফ্ল্যাটের সহনীয় ভাড়াও এখন চাপ বলে মনে হয় কারও কারও।

 

সার্ভিস চার্জসহ ৫৯০০ টাকার থাকার সুবিধা পাচ্ছেন বরাদ্দ পাওয়া বস্তিবাসী। ৬২০ থেকে ৭১৯ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি করে বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি ড্রয়িং রুম, বেসিন, রান্নাঘর, একটি আলাদা টয়লেট ও একটি আলাদা বাথরুম। টাইলস করা এসব ফ্ল্যাটের দুই পাশে বাতাস চলাচলের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা।

 

এছাড়া প্রতিটি ভবনে রয়েছে দুটি লিফট ও প্রশস্ত সিঁড়ি, কমিউনিটি হল, অগ্নিনির্বাপণ ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ৪০ কেভিএ জেনারেটর ও ২৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিংসহ আধুনিক সুবিধা। প্রতিটি ভবনের নিচতলা বরাদ্দপ্রাপ্তদের সাধারণ ব্যবহার ও ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য ভবনের সামনে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে।

 

কথা হয় ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া সেলিনা বেগমের সঙ্গে। স্বামী, এক মেয়ে, এক ছেলে ও ছেলের বউ মিলে বর্তমানে এখানে রয়েছে। স্বামী ভ্যানে করে মুরগী বিক্রি করেন, ছেলে বেনারসি কারচুপির কারিগর। এর আগে গত ৩০ বছর ধরে ছিলেন মিরপুর কলাবাগান বস্তিতে।

 

তিনি বলেন, বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় আইসা বস্তিতে উঠি, কিন্তু কোনোদিনই এই পরিবেশ ভালো লাগতো না। খুপরি ঘর। গোছলের জায়গা ছিল না। লজ্জা লাগতো। আবার মেয়ে বড় হইতাছে। কিন্তু উপায় ছিল না। স্বামী যেইখানে রাখছে সেইখানেই মানায়া নিতে হইছে। মনে একটা ইচ্ছা ছিল, আল্লাহ যদি তৌফিক দেয় ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো জায়গায় থাকবো।

 

কিন্তু আয় রুজি ভালো না হওয়ায় সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য গত বছর থেকে এই ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাইছি। ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট বাড়ির যে ভাড়া, কখনও কল্পানাও করি নাই। এখন সেইটা সম্ভব হইতাছে। চারদিক কি বাতাস! নিজের ঘর দুয়ার।

 

মর্জিনা আক্তার নামে আরেক বসিন্দা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ছেলে-মেয়েগুলারে ভালো জায়গায় রাখতে পারতাছি। এইটাই ভালো। কিন্তু আমাদের তো আয় কম। বস্তিতে থাকার কোনও খরচ ছিল না।

 

বিদ্যুৎ আর পানির জন্য ৫০০ টাকা দিলেই হইতো। এখন এইখানে আইসাই ছয় হাজার টাকা ঘর ভাড়া। গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল নিয়া আরও খরচ। এইসব খরচ দিয়া পেটে খাওন দিতে কষ্ট হইয়া যায়। ভাড়া যদি আরও কম দিতো তাইলে আমাগো জন্য উপকার হইতো।

 

বাসিন্দারা জানান, কিস্তিতে ফ্ল্যাট দেওয়ার দাবি করে বলেন, যদি ফ্ল্যাট কিস্তিতে দেয় তাহলে কষ্ট করে টাকা পরিশোধ করতে হইলেও মনবল থাকতো যে ভবিষ্যতে জন্য কিছু কইরা যাইতাছি।

 

ফ্ল্যাটে আসার পর অধিকাংশ বাসিন্দার জীবনধারার পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে তারা পরিচ্ছন্ন-স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানিয়ে নিচ্ছেন জানিয়ে হাবিব নামের এক বাসিন্দা বলেন, এই জায়গার সবাই কলবাগান বস্তি থেকে আসছে। কম-বেশি সবারই মুখ চেনা। কে কী ছিল আর এখন কীভাবে চলে তা দেখছি। দীর্ঘদিন আমাদের বস্তিতে পরিবেশ ভালো না থাকলেও কম খরচে থাকার অভ্যাস। তাই ভালো পরিবেশের আগে টাকার হিসাবটা করি।

 

আয়ও তো কম, আয় বেশি থাকলে তো আর কেউ বস্তিতে থাকে না। তবে ধীরে ধীরে এইখানে অভ্যাস হয়ে গেলে মানায়া নিবো। আর শুরুতেই ভাড়া ছয় হাজার টাকা না করে দুই হাজার দিয়ে শুরু করলে ভালো হইতো। এতে সঞ্চয়ও করতে পারতো। এমনিতেই তো অনেকের ভাড়া বকেয়া পড়ে গেছে। এইটা একটা প্রেশার হয়ে দাঁড়াইছে।

 

এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বস্তিবাসী যুক্তিসঙ্গত ভাড়ায় একটি আধুনিক ফ্ল্যাটে বসবাসের সুযোগ পাবেন। এতে স্থানীয় পরিবেশসহ বস্তিবাসীর জীবনমানের উন্নতি ঘটবে বলে মনে করছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এসব ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসের যেকোনও সময় পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছেন বাসিন্দারা।

 

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা, নকশা ও বিশেষ প্রকল্প বিভাগের সদস্য বিজয় কুমার মন্ডল বলেন, বস্তিবাসীর জন্য এটা রাত-দিন পার্থক্য। পরিবেশগত দিক থেকে আগের তুলনায় তারা এখন অনেক উন্নত জীবনে বসবাস করছেন। এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আর আমরা নিজ অর্থায়নে নিজ ভূমিতে এই প্রকল্প করেছি। আর অন্য কিছু চিন্তা করিনি।

 

এইখানে থাকার জন্য যে সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া, তা দিয়ে শত বছরেও এই প্রকল্পের টাকা উঠবে না। তবুও বস্তিবাসী ভালো থাকবে। তাদের জীবনমানের পরিবর্তন আসবে। তাদের আগামীর প্রজন্ম আর পিছিয়ে থাকবে না। এইটাই আমাদের সফল্য, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন।

 

ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব ফ্ল্যাটে বর্তমান রেটে অন্তত ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া পড়বে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা (বস্তিবাসীরা) এত ভাড়া দিতে পারবে না। তাই আমরা মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছি। এটা আমাদের রেভিনিউতে যুক্ত হবে। এর বাইরে ১৯০০ টাকা যেটা সার্ভিস চার্জ হিসেবে ধরা হয়েছে, সেটা পাম্পের মাধ্যমে পানি তুলতে হয়, সিকিউরিটি গার্ড আছে, পরিচ্ছন্ন কর্মী আছে, লিফট আছে, সুপারভাইজারসহ আরও অনান্য লোক আছে। তাদের বেতন বহনের জন্য এই সার্ভিস চার্জ তারা নিজেরাই দেবেন।

 

আরও খবর

Sponsered content