সারাদেশ

ভুল অপারেশনে লিঙ্গ কর্তন, পচন ধরায় ৪র্থ দফায় সার্জারি

ভুল অপারেশনে লিঙ্গ কর্তন, পচন ধরায় ৪র্থ দফায় সার্জারি

নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে সরকারি ভাবে সিলগালা করা কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে ভুল অপারেশন করে শিশুকে খতনা করতে গিয়ে লিঙ্গ কর্তনের ঘটনায় ৮ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংকটজনক অবস্থায় লিঙ্গে পচন ধরলে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে আবারো অপারেশন করা হয়েছে।

 

অপারেশন শেষে ডাক্তার জানান, আগের ডাক্তার লিঙ্গের মাংস কেটে কসটিভ ও এক জাতীয় গাম দিয়ে রক্ত বন্ধ করে দিয়েছিলো ফলে ঐ জায়গায় রক্ত জমে পচন ধরেছে। তাই আবারো সার্জারি করা হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আউশকান্দি কেয়ার ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছে। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে ভেড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকি দিয়ে বলছে নিউজ করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।

গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে সরকারি ভাবে সিলগালা করা কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে ভুল অপারেশন করে শিশুকে খতনা করতে গিয়ে লিঙ্গে অতিরিক্ত মাংস কর্তনের ফলে প্রচুর রক্ত করণ হয়। পরে রোগী কান্নাকাটি করলে তাকে ও তার আত্মীয় স্বজনকে চিকিৎসক ও মালিক পক্ষের মারপিট করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এঘটনায় ঐ দিনই নবীগঞ্জ থানায় মামলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলাটি নবীগঞ্জ থানায় রেকর্ড করা হয়নি। কোনো আসামি গ্রেফতার করা হয়নি, ফলে বাদী পক্ষকে হুমকি দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। আহত শিশু তামিমকে তিনদিন তাদের জিম্মায় একটি প্রাইভেট হসপিটালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অভিভাবকরা একজন সার্জারি ডাক্তারের পরামর্শ নেন। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

গতকাল সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. সিরাজুল ইসলামের অধীনে তার চতুর্থ দফা অপারেশন হয়। বর্তমানে সে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৩ নং ওয়ার্ডে ৩নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এবিষয়ে ভুল অপারেশনের শিকার শিশু তামিমের চাচা হারুন মিয়া বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবারও সেন্টারটি খোলা হয়েছে। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে কেন সরকারি সিলগালা করা ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা হলো এদের খুঁটির জোর কোথায়?

এদিকে খতনা করতে লিঙ্গ কাটার জন্য গুরুতর আহত শিশু তামিম আহমদ বর্তমানে অপারেশনকারী ডাক্তার জহিরুল ইসলাম জয় ও মালিক সুহুল আমিন এর জিম্মায় ৩দিন সিলেট আল হরা মাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সেখানে রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে কোনো সাংবাদিক বা আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ মার্চ বুধবার সন্ধ্যা ৬ টার সময়, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজার কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এর আগে উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৫ দিন পূর্বে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অনুমোদন বিহীন থাকায় সিলগালা করা হয়।

জানাজায়, ৬ মার্চ ঐদিন বিকাল ৪ টার সময়ে নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের ফরিদ পুর গ্রামের আব্দুশ শহীদের পুত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তামিম আহমেদ (১২)কে খতনা করার জন্য নিয়ে আসলে কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সুহুল আমিন ও ডাক্তার জহিরুল ইসলাম চৌধুরি জয় সরকারি সিলগালা করা কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালা খুলে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন।

হঠাৎ রোগীর চিৎকার শোনে মা বাবা আত্মীয় স্বজন ভিতরের প্রবেশ করে দেখতে রোগী কেন চিৎকার করছে তার জন্য ডাক্তার ও মালিক রোগী কে চর থাব্বর মারছেন। তারা প্রতিবাদ করলে মালিক সুহুল আমিন ও তার লোকজন রোগীর আত্মীয় স্বজন কে মারপিট করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বাহির করে দেন। রাতে শিশু তামিমের চাচা হারুন মিয়া বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের ডাক্তার ও মালিক কে সহ গং ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এবিষয়ে শিশু তামিমের চাচা হারুন মিয়া বলেন, আমার ভাতিজা কে খৎনার নামে ভুল অপারেশন করে লিঙ্গে অতিরিক্ত মাংস কেটে ফেলে, প্রচুর রক্ত করণ হয়েছে,সে কান্না কাটি করলে তামিম কে ডাক্তার ও মালিক মারপিট করেছেন।

তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেটে একটি বেসরকারি হসপিটাল আল হারামাইনে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন তাদের জিম্মায় রেখে ছেড়ে দেয়। পরে আমরা সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। আমি নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই আই গৌতম দাশ বলেন, আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। আমরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি তালাবদ্ধ পেয়েছি, মামলার বাদী তার চাচা হওয়ার কারণে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তিনি বলেন তার চাচা সঠিক অভিভাবক নয়, তার মা বাদী হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তামিমের মা পারভীন বেগম জানান, আমার ছেলেকে ডাক্তারগণ তাদের জিম্মার সিলেট আল হারামাইন হসপিটালে ভর্তি করে তিন চিকিৎসা করে ছেড়ে দেন। আমি পরে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। আজকে অপারেশন করে ডাক্তার জানান তারা ভুল অপারেশন করে গাম দিয়ে রক্ত বন্ধ করে রাখেন, এই জন্য রক্ত জমাট বেঁধে পচন ধরেছে। আজকে আবারো সার্জারি করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলী জানান, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন, ঘটনাটি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়েছি। আমাদের করণীয় যা করার তা করেছি। এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করা হয়নি, ঘটনাটি তদন্ত চলছে। রোগী এখন চিকিৎসাধীন আছে।

আরও খবর

Sponsered content