সারাদেশ

মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে প্রবল স্রোতে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পাড় ভাঙার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও ভেঙেছে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বোর্ডের জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বাঁধের ৩০ মিটার স্পার ভেঙেছে। এ ছাড়া রোববার সকালে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত শনিবার বিকালে যা ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।

পানি কিছুটা কমলেও কুড়িগ্রামে তিস্তার পাড় ও বাঁধে ভাঙনের ফলে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙনের মুখে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি বাজার। পাশাপাশি গত দুই দিনের বন্যায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলার রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে নদী ভাঙন। খিতাবখাঁ এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের নেই মাথা গোজার ঠাঁই।

বন্যায় নিজের বসতভিটা ও ঘর ভেঙে গেছে বলে জানান, রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মামুনুর রশীদ।

এই জনপ্রতিনিধি জানান, এ এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এখানে খিতাবখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, চর খিতাব খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুড়িরহাট বাজার হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যে কোনো মুহূর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

তীর সংরক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে, গত কয়েকদিনে বেড়েছে কুড়িগ্রামে প্রায় ১৬টি নদ-নদীর পানি।

বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তার ভাঙনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বাড়িঘর বিলীন হয়ে খবর জানা যায়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে এ দুটি ইউনিয়নের ৫০০ বাড়িঘর ডুবে গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পানি বাড়তে থাকায় রাস্তাঘাট অনেক স্থানে তলিয়ে গেছে। এতে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগির খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিনহাজুল বলেন, আমার ইউনিয়নের সরিষাবাড়ী এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানি উঠেছে। এখানে দুই শতাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

কিসামত নাকেন্দা এলাকার ভুন্দুর বাজার জোলাপাড়ার মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম (৫০) বলেন, গ্রামের ৭৫টি বাড়ির মধ্যে ৪৫টি বাড়িতে পানি উঠেছে।

একই গ্রামের জয়নালের স্ত্রী মাহমুদা (৪৫) বলেন, আমার ছোট পুকুরে ৪-৫ হাজার টাকায় প্রায় ১৮ কেজি মাছের পোনা ছেড়েছিলাম, সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

বন্যায় ৭০৫ হেক্টর আমন ধান, ৮ হেক্টর বীজতলা ও ১১০ হেক্টর সবজি ক্ষেত ছাড়াও পুকুর নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানিয়েছেন।

ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে এসে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে তাসনিম বলেন, আমার কাছে ২০ জন নদী ভাঙন কবলিত পরিবারের তথ্য এসেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এখানে ৫০টি দুঃস্থ পরিবারে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন ও বন্যা কবলিতদের জন্য দেড় টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা খোঁজখবর রাখছি যাতে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে; এ জন্য নৌকা, আশ্রয়কেন্দ্র এবং শুকনো খাবার মজুত আছে। মেডিকেল টিমও তৈরি আছে। আশা করছি, আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একটি বাজার যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন ও বন্যা কবলিতদের সহযোগিতার জন্য পর্যন্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে বিষয়গুলো তদারকি করছি।

আরও খবর

Sponsered content