স্বাস্থ্য

পুরুষের সমস্যা পেরোনিজ ডিজিজ

পুরুষের সমস্যা পেরোনিজ ডিজিজ

পুরুষাঙ্গে দুটি দণ্ড আকৃতির প্রসারণশীল অংশ থাকে, যার চারপাশ টিউনিকা অ্যালবুজিনিয়া নামক একটি শক্ত টিস্যু দ্বারা আবৃত থাকে। এই শক্ত জিনিসটাই পুরুষাঙ্গের উত্থান অবস্থা ধরে রাখে। নানা কারণে এই টিস্যুর উপরিভাগটায় বিভিন্ন আকৃতির শক্ত গুটির মতো দানা দেখা দেয়। একে পেরোনিজ ডিজিজ বলে।

সাধারণভাবে ৩ থেকে ২০ শতাংশ পুরুষ এই রোগে ভোগেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। খুব সূক্ষ্ম আঘাতের কারণে পুরুষাঙ্গে এই রোগের শুরু বলে মনে করা হয়। এই রোগের দুটি স্তর বা পর্যায় আছে। একটা হলো অ্যাকটিভ, আরেকটি ক্রনিক ফেজ।

প্রথম পর্যায়ে ব্যথা থাকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আর ব্যথা থাকে না; বরং শক্ত গুটির ব্যাপ্তি বেড়ে যেতে পারে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাথুরি জমতে পারে বা পুরুষাঙ্গের বিকৃতি ঘটতে থাকে, যা কিনা পরবর্তী সময়ে যৌনক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত পুরুষত্বহীনতা পর্যন্ত হতে পারে।

রোগটি ৪০-৫০ বছরের দিকে বেশি হয়; যদিও যে কোনো বয়সেই হতে পারে। যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস রোগ ছাড়াও কোনো ধরনের যৌন দুর্বলতা আছে, যারা মানসিকভাবে খুবই দুর্বল, যৌনাঙ্গগুলো ছোট বা রক্তে সেক্স হরমোনের পরিমাণ কম, যারা আরও কিছু কোলাজেন ডিজঅর্ডারে ভোগেন– তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশি। এই রোগ ইউরোলজিস্টরা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাতেই ধরতে পারেন। যদিও আনুষঙ্গিক কিছু পরীক্ষা, যেমন– এক্স-রে বা কালার ডপলার আলট্রাসনোগ্রাম করা যেতে পারে।

চিকিৎসা: একজন দক্ষ সার্জন বা ইউরোলজিস্ট এ রোগ নির্ণয় করতে পারেন এবং চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন। অনেকে ভিটামিন-ই সেবন করেন; কিন্তু এগুলো তেমনভাবে কার্যকর নয়। পেন্টক্সিফাইলিন বা পটাশিয়াম প্যারা-অ্যামিনোবেনজয়েট জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি এগুলো কাজ না করে, তবে আপনি পুরুষাঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত কলায় কোলাজেনেস (জিয়াফ্লেক্স) বা ভেরাপামিলের শট নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, থেরাপি দেওয়ার আগে এসবের কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে চিকিৎসকের সঙ্গে  পরামর্শ করতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে ওষুধ কাজে আসেনি, পুরুষাঙ্গের বিকৃতি ঘটেছে, যাতে করে যৌনক্রিয়ার খুবই অসুবিধা হচ্ছে বা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স সমস্যা হচ্ছে– সেসব ক্ষেত্রে  সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেসব সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্ট।

লেখক: ইউরোলজিস্ট ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন; অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি বিভাগ; জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল ও কনসালট্যান্ট আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।