ধর্ম

ঈদ সালামি দেওয়া কি জায়েজ?

ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে আনন্দ। আর ঈদের দিনে উৎসবের একটি পর্ব হলো বড়দের থেকে ছোটদের সালামি পাওয়া। ছোটরা এ জন্য নানাভাবে বড়দের কাছে বায়নাও ধরেন। এ ছাড়া বড়রা ছোটদের স্বতস্ফূর্তভাবে সালামি দিয়েও মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন। এটি ঈদের আনন্দকেও অনেকাংশ বাড়িয়ে দেয়। প্রশ্ন উঠতে পারে ঈদে সালামি দেওয়া কি জায়েজ? ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা রয়েছে কিনা। উত্তর হলো ঈদে সালামি দেওয়ার বিষয়ে ইসলামে কোনো আপত্তি বা ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। এটি পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এর মাধ্যমে ছোটদের প্রতি বড়দের ভালোবাস ও স্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ, বুখারি; মুসনাদে আহমাদ)

মানুষকে খুশি করা ইসলামের দৃষ্টিতে মর্যাদাপূর্ণ কাজ। উপহার দেওয়া-নেওয়ার প্রতিও ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে করে সম্পর্ক দৃঢ় এবং সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।

রাসুল (স.) বলেছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে কিছু দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করে, সে তার ইমান পূর্ণ করল। (তিরমিজি: ২৫২১)

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত অপর হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুল (স.) বলেন, তোমরা পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। (আদাবুল মুফরাদ : ৫৯৪)

ঈদ সালামি দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা দরকার। তা হলো :
ঈদে সালামি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় ছোটরা বড়দের পা ছুয়ে সালাম করার প্রচলন রয়েছে। এটি অনৈসলামিক কালচার। কেউ এমনটি করলে তাকে নিষেধ করতে হবে।

সালামি দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। এতে করে কারো মন খারাপ হতে পারে। একজনের দেখে অন্যের মনে আঘাত না লাগে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা দরকার।

সালামির টাকা এতটাও বেশি হওয়া উচিত নয় যে কেউ যাতে তা অতিরঞ্জিত খরচ করে। এছাড়া সন্তানরা গুনাহের কাজে ব্যয় না করে সেটি লক্ষ রাখা দরকার।

ঈদ সালামির একাল সেকাল
ঈদুল ফিতরের অন্যতম আকর্ষণ হলো ঈদি বা ঈদ সালামি। নামাজ শেষে কোলাকুলির পরই বড়দের থেকে ঈদি নেওয়ার পর্ব শুরু হয়। তবে যুগ বদলালেও চিরাচরিত এ নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নতুন টাকার নোট ঈদ সালামি হিসেবে পেয়ে থাকে ছোটরা।

নব্বইয়ের দশকের আগে তরুণ-তরুণীরা ঈদ সালামির অন্যরকম আমেজের সাথে পরিচিত ছিলেন। তখন স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ায় তা এখন কিছুটা ভিন্নতা পেয়েছে। ওই সময়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ঈদ সালামি পাওয়া নিয়ে চলত নীরব প্রতিযোগিতা।

এখন সালামির আর্থিক প্রয়োজন আগের মতো নেই। তবে সালামির সেই প্রশান্তি এখনও রয়েছে। তবুও বিকাশ নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের ঈদ সালামির প্রচলনই জানা দেয় এর জনপ্রিয়তা।
ঈদ সালামি মানে নতুন টাকা। ব্যাংক থেকে আগেই বড়রা ছোটদের জন্য সংগ্রহ করে রাখেন। ছোটরা এ নোট পেয়ে আলাদা আনন্দে ভাসেন। সালামির নতুন নোট তারা পরম যত্নে রেখে দেন।

আগের সময়ে দুই পাঁচ টাকার সালামি ছিল সাধারণ বিষয়। তবে এখন বেড়েছে সালামির অঙ্ক। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে পাঁচশ বা হাজার টাকার নোটে গিয়ে ঠেকেছে।

বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সালামিতেও এসেছে নতুনত্ব। আগে হাতে হাতে হলেও এখন অনলাইনে সালামি আদান-প্রদান হয়। এ যাত্রার অন্যতম অংশ হলো মোবাইল ব্যাংকিং। ফলে দূর-দূরান্তে থাকা যেকেউ পেয়ে যান সালামির অর্থ।

বর্তমানে সালামি নেওয়া-দেওয়ার পরিধিও বেড়েছে অনেকগুণে। আগে পরিবার আর স্বজনদের মধ্যে এটি সীমিত থাকলেও এখন এটি কর্মস্থলেও প্রচলন দেখা যায়। ঈদের আগে পরে দেখা হলেই পড়ে যায় সালামি নেওয়ার ধুম। অফিসের বস বা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা জুনিয়র সহকর্মীদের সালামি দিয়ে থাকেন।

যেভাবে এলো ঈদ সালামি
ঈদ সালামির প্রচলন নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, মধ্যযুগের শুরুর দিকে ঈদ সালামি প্রদানের সূচনা হয়। ফাতিমীয় খেলাফতের সময় শিশু কিশোর ও বয়স্বদের অর্থ, মিষ্টান্নজাতীয় খাবার অথবা পোশাক উপহার দেওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে মামলুক সাম্রাজ্যের আমলে পোশাক পরিচ্ছদ কেনার জন্য ঈদের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ প্রদানের প্রচলন শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় উসমানী সাম্রাজ্যের শেষ দিকে এ প্রথা ব্যাপকভাবে পারিবারিক পরিসরে বিকাশ লাভ করে। এই সময় থেকে পরিবারের মাতা পিতা ও জ্যেষ্ঠদের থেকে শিশুদের নগদ অর্থ উপহারের ব্যাপক প্রচলন সর্বত্র ছগিয়ে পড়ে।

ইসলামের প্রসারেরর সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশে ঈদ সালামির ব্যাপক প্রচলন ঘটে। কালের বিবর্তনে এ ঈদ সালামি এখন সামজিক রীতি ও ঐতিহ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে ঈদের সঙ্গে এর প্রচলন থাকলেও এখন তা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও খবর

Sponsered content